৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

মোঃ রফিকুল ইসলাম,বিশেষ প্রতিনিধি। আগষ্ট ১৩, ২০১৭ রাজারহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ॥ ধরলা ও তিস্তায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি ॥ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও ৩ দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম-রংপুর আর কে রোডে হাঁটু পানি উঠায় চরম জন দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বাস মিনিবাসসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বন্যার। বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে চরম অবনতি হওয়ায় উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের ধরলার তীরবর্তী কালুয়া ও বাংটুর ঘাট বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় তিন হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। অপরদিকে তিস্তা নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলো ডুবে যাওয়ায় চরের প্রায় ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সাথে গৃহপালিত গবাদীপশু গরু-ছাগল-ভেড়া, হাঁস-মুরগীও পানির উপরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। চরম সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। অনেক পানি বন্দী পরিবার গবাদী পশুসহ বাঁধের অপরদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বাঁধে এবং অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ঘরে পানি উঠায় অনেকে মাচাং করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এদিকে ধরলা নদীতে ৩টি লাশ ভেসে এসেছে বলে বন্যাকবলিত প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ওইসব ক্যাম্পে চিকিৎসা প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র সূত্রে জানা গেছে।
বন্যাকবলিত পরিবারগুলো জানান, ধরলা এবং তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারন করছে। গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা এবং তিস্তা নদীর সব ক’টি চরাঞ্চল ডুবে গেছে। এমনকি পানির তীব্রতা প্রখর আকার ধারন করায় ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদসহ কুড়িগ্রাম- রংপুর আর কে রোডের উপর দিয়ে হাঁটু পানি প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে সাময়িকভাবে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষ পানির তীব্রতা দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর রোপা-আমন ক্ষেত, সবজি ক্ষেত, শত শত মৎস্য খামার এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া চরের শত শত মানুষজন গবাদী পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ছিনাই ইউনিয়নের ছিনাই কিং আবুল হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর তৈয়ব খাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বিদ্যানন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যাল, নামাভরট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগুড়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর খিতাব খাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছিনাই হাট বড় ঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিশামত ছিনাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেখলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঘব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালুয়ার চর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুসুল্লী পাড়া দাখিল মাদ্রাসাসহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় প্রতিষ্ঠনগুলো বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়া আরো ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্য্যান মো. জাফর আলী, জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ্ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেম, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুনুর মো. আক্তারুজ্জামান ও জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস ছালাম ছিনাই ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকাসমুহ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
রোববার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ময়নুল হক জানান, বন্যাকবলিত পানিবন্দি আড়াই হাজার পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল, শুকনা চিড়া-গুড়-মুড়ি-চিনি বিতরন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৪০ হাজার টাকার অনুদান পাওয়া গেছে। এছাড়া বন্যা কবলিতদের জন্য আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান হক বুলু জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এলাকার সব বাড়ী-ঘর পানির নিচে তলিয়ে যাবে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম ধরলা পয়েন্টে ১১৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্ট ২৯.০৪ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নীচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *