৫০০ পরিবার এখনও গৃহ নির্মাণ করতে পারেনি

৫০০ পরিবার  এখনও গৃহ নির্মাণ করতে পারেনি

রফিকুল ইসলাম,
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে স্মরণকালের এবারের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও ৫০০ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার আর্থিক দৈন্যতার কারণে এখনও গৃহ নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ওইসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।
গত আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে আকস্মিকভাবে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের নি¤œাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায়। ওই সময় পানির প্রবল ¯্রােতে ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর এলাকায় সহ¯্রাধিক ঘর-বাড়ী দুমড়ে-মুছড়ে নিশ্চিহৃ হয়ে পড়ে। ফলে ওই পরিবারগুলোর হাঁস- মুরগী, গরু-ছাগল, ধান-চাল, তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, স্কুল কলেজ পড়–য়াদের বইপত্র নষ্ট হয়ে যায়।
বন্যায় সাড়ে ৩হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন বিনষ্ট হয়। এর মধ্যে বীজতলা ও সবজি জমি নষ্ট হয় ১’শ হেক্টর। এদিকে ৫হাজার হেক্টর জমির মৎস্য খামারের মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। বন্ধ হয়ে যায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাস্তার অসংখ্য জায়গায় পানির প্রবল ¯্রােতে ভেঙ্গে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্যার সময় ভেঙ্গে যায় ৮টি ব্রীজ ও ১২/১৪ কালভার্ট। পূর্ণ সংষ্কার না হওয়ায় বর্তমানে ওই এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। সবমিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
বন্যা কবলিত এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বানভাসি মানুষের দুঃখ-দূর্দশার অন্ত নেই। অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তারা নতুন করে বাঁচতে চায়। কিন্তু বন্যার সময় তাদের সবকিছু খুঁইয়ে যাওয়ায় বর্তমান চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। তাদের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। বন্যাকবলিত এলাকার নাজমা (৩৮), বেগম(৪৫), ছালমা(৪৫), সুরতভানু(৬৫), শাহেদ আলী (৪৮), আঃ হামিদ(৬০), মোহাম্মদ আলী (৭৫), কছিমুদ্দিন(৬০) সহ অনেকে বলেন, এনজিও থাকি এক বাইন টিন দিছে, বাঁশ ক্যানার ট্যাকা নাই, ঘর তুলবার পাং নাই। হামারগুলার সবারে এ্যাকে অবস্থা। কারো পকেটে ট্যাকা নাই। অনেকের সাথে কথা বলে একই অবস্থা জানা যায়।
এছাড়া ওই এলাকার বানভাসি মানুষজন জানান, একবার রিলিফের ১০ কেজি চাল পাওয়া গেছে। যা দিয়ে একটি পরিবারের ক’দিনের ক’জনের খাদ্য নিবারণ করা যায়? এমনকি বর্তমানে এ এলাকায় কোন কাজ-কর্ম নেই। তাই তারা ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হক বুলু জানান, একে বারে অতিদরিদ্র ১৫৬টি পরিবারের ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হওয়ার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু ৪টি ইউনিয়নে এক হাজারেরও বেশী ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।
রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল হক জানান, বন্যা পরবর্তী বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরিবার প্রতি ১বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে কবে নাগাদ এসব উত্তোলন করে বিতরন করা হবে তার সঠিক বলতে পারেননি তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অতিসত্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে টিন ও অর্থ গ্রহণ পূর্বক তা বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকস্মিক সফরে এসে তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বন্যার্তদের বিভিন্ন সহযোগীতা করে ক্ষতিগ্রস্থদের ৩মাস পর্যন্ত ত্রাণ সরবরাহ এবং গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক সংগঠনের সহযোগীতায় ক্ষতিগ্রস্থ বানভাসিরা কোন রকমে জীবন নির্বাহ করলেও তাদের বিধ্বস্ত গৃহ নির্মাণ করতে পারেননি। বন্যায় তাদের সবকিছু হারিয়ে যাওয়ায় তারা বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ী, বাঁধের রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে কোন রকমে রাত্রি যাপন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *