পঙ্গুত্ব হার মানাতে পারেনি সেকেন্দার আলীকে
নিজস্ব প্রতিবেদক,,
শত প্রতিকুলতা পেরিয়ে স্বাভাবিক সাচ্ছ্যন্দময়ের মধ্য দিয়ে চলছিলো তার জীবন। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, পেশায় ছিলেন একজন কাঠ মিস্ত্রী। দৈনন্দিন কাজের আয় রোজগার দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল ভাবেই চলছিল তার জীবন সংসার।
হঠাৎ বিগত ১৭ বছর পুর্বে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন পাঁ দুটি। দুর্ঘটনায় তার দুটি পায়ের হাড়ই ভেঙ্গে যায়, হারিয়ে ফেলেন কর্মক্ষমতা। সহায় সম্বল সবকিছু বিক্রি করে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে অনেক চিকিৎসা করেও সফলতা আসেনি।
জোড়া লাগাতে পারেনি পায়ের হাড় দুটি। অবশেষে ডাঃ এর পরামর্শে নিরুপায় হয়ে কেটে ফেলতে হয় পাঁ দুটি। জীবনে নেমে আসে চরম অন্ধকার। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তি পঙ্গুত্ব বরন করায়, পরিবারে নেমে আসে ভয়াল অভাব, তবুও থেমে থাকেনি সেকেন্দার আলী, আত্বসন্মান বোধ চিন্তা করে কখনো কারো কাছে সাহায্যর জন্য হাত বাড়িয়ে দেননি।
সামান্য কিছু সঞ্চয় অর্থ দিয়ে রাজারহাট উপজেলা সদরে শান্তিনগর মোড়ে অন্যর জায়গায় কয়েকটি টিন দিয়ে চালা তৈরী করে ছোট একটা মুদি দোকান দিয়ে চলছে তার জীবন সংসার। রোজ দিন ফজরের নামায পড়ে হুইল চেয়ারে করে রওয়ানা দেন ব্যবসার উদ্দ্যেশ্যে পান বিক্রির জন্য। দৈনন্দিন বেচা কেনার সামান্য আয় দিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে চলে তার সংসার।
তবু ও পঙ্গুত তাকে কখনো থামাতে পারেনি। সেকেন্দার আলী তার মনোবল কখনো হারাননি। তার ব্যবসায়িক সততা কর্ম দক্ষতা উদ্যম সাহসিকতা ও অসহায়ত্ব অবস্হা রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি মানবিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
ইউএনও মহোদয় নিজ উদ্যেগে তার দোকানের মেঝে প্লাষ্টার ও মালামাল রাখার কিছু রেক তৈরী করে দেন এবং আগামিতেও সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক ভাল কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এ ব্যপারে সেকেন্দার আলীর (৫৫)সংগে কথা হলে তিনি বলেন,ইউ এন ও মহোদয় অনেক সৎ নিষ্ঠাবান ও ভাল মনের মানুষ।
এখনো তিনি মাঝে আমার খোজ খবর নেন। আল্লাহ তার মঙ্গল করুক। আর বর্তমানে অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে দোকানে কাষ্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী পন্য সামগ্রী অনেক কম হওয়ায়, বিক্রির পরিমান ও অনেকটা কমে গেছে। এই সামান্য আয় দিয়ে পুরো সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে খুবই হিমশীম খাচ্ছি।
মনে হচ্ছে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হারতে বসেছি। স্বপ্ন ছিল সন্তানদের লেখা পড়া চালিয়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলব।
সৃষ্টিকর্তাই জানে জানিনা, স্বপ্ন পুরন করতে পারব কিনা। তবে আমার জীবনে আর বড় কোন স্বপ্ন নেই। কোন সরকারী/ বেসরকারী/এনজিও প্রতিষ্ঠান যদি ইউএনও মহোদয়ের মত মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমার প্রতি একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তাহলে ছেলে মেয়ের লেখা পড়াটা ভাল ভাবে চালিয়ে যেতে পারতাম। নয়ত খুবই কষ্ট কর হচ্ছে পথ চলা। সমাজের উচ্চ বিত্তবান মানুষগুলো একটু সুদৃষ্টি দিলেই যে কটা দিন বাঁচতাম হয়ত একটু স্বস্তিতে বেচে থাকতে পারতাম।
সেকেন্দার আলীর মত নিষ্টাবান উদ্যম সাহসিকতার মানুষরা আমাদের সমাজের গর্ব ও অনুপ্রেরনা।