শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধনঃ নতুন জীবনযাত্রায় নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়িবাসী

শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধনঃ নতুন জীবনযাত্রায় নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়িবাসী

Rajarhatbd.com
এএনোমান,
দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে উত্তরের পাঁচ জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা সবার শীর্ষে। এর পিছনে বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়া অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত। রংপুর থেকে নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-ফুলাবাড়ি দূরত্ব কম হওয়া সত্ত্বেও ৫০ কি.মি. অতিরিক্ত পথ যেতে হয়। “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু” উদ্বোধন হওয়ায় এই দূরত্ব আর অতিক্রম করতে হবে না কুড়িগ্রাম এর নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়িবাসীদের। ঢাকা যেতে ২-৩ ঘণ্টা বাঁচবে তাদের।

উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু” উদ্বোধন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশারফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবসহ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তারা।

ফুলবাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত সচিব রইচ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল আলম, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড.মতিয়ার রহমান প্রমুখ।

এই ভিডিও ককনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদ, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সফুরা খাতুন, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবুসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

এর আগে ২০১২ সালে ২০ শে সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ি উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় কুড়িগ্রাম জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ২য় ধরলা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই সেতু নির্মাণ বাজেট ছিল প্রায় ১৯১ কোটি টাকা। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ২০১৪ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণ করছে সিমপ্লেক্স এবং নাভানা কনস্ট্রাকশন গ্রুপ।

সেতুটি দীর্ঘদিন থেকে খুলে না দেয়ায় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিল না উক্ত এলাকার ১০ লাখেরও বেশী লোকজন। তাই বেশ কিছুদিন আগেই খুলে দেয়া হয়েছিল সেতুটি। সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ফলে অঞ্চলটির আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের প্রত্যাশা সকলের। সেই সাথে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষাও এলাকাবাসীর। এই সেতুর ফলে প্রান্তিক জেলার সার্বিক উন্নয়ন তথা শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক উন্নতি হবে হবে বলে ধারণা বিশিষ্টজনের।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বর্ষা মৌসুম ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে স্থানীয়দের সুবিধার্থেই সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়েছে।

১৯১ কোটি ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ২শ ২৩ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই সেতুর মূল সেতুর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ফুলবাড়ী ও লালমনিরহাট অংশে ২ হাজার ৯১৯ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ বাবদ ১৩ কোটি ৯ টাকা, ৩ হাজার ৪৮০ মিটার নদী শাসনে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়। সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৯৫০ মিটার দীর্ঘ, ৯.৮ মিটার প্রস্থ। ১৮টি পিলারের উপর ১৯ টি স্প্যান রয়েছে এবং এর গার্ডার সংখ্যা ৯৫ টি।

এই সেতু নির্মাণের ফলে বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ফুলবাড়ীর শেখ হাসিনা ধরলা সেতু দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যসহ অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের পণ্য পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে। যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটবে বাংলাদেশসহ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টারস খ্যাত সাতটি রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুনাচলের। একই সঙ্গে এসব রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংরাবান্ধা হয়ে কলকাতায় যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হবে।