চাকরিতে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কৌশল

চাকরিতে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কৌশল

September 8,2018 admin
লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
সিদ্ধান্ত দেয়াও একপ্রকার শিল্প। অনেক বস সিদ্ধান্ত দিলেই সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়ে যায়। আবার অনেক বস সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বারবার ফেল করেন।

কারণ কী?
সোজাসাপ্টা বলতে গেলে এর কারণ হচ্ছে, একজনের ডিসিশন মেকিং মডেলের কম্প্রিহেনসিভ ধারণা আছে, কিন্তু অন্যজনের নেই।

কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড এখন এই পর্যায়ে চলে গেছে যে এখানে এখন একদিক দিয়ে হাবাগোবা ধরনের মানুষ ঢুকে অন্য দিক দিয়ে দক্ষ ম্যানেজার এবং লিডার হয়ে বের হয়।

কীভাবে সম্ভব?
ম্যানেজমেন্টের বেসিক নলেজ এবং সেই নলেজের কার্যকর ব্যবহার।

চলুন জেনে নিই– সিদ্ধান্ত কীভাবে নেব বা দেব।

এক.

আপনি মিস্টার/মিস এক্সকে বিয়ে করতে যাবেন।

কার পরামর্শ নেবেন?

কার সিদ্ধান্তে আস্থা রাখবেন?

নিশ্চয়ই এমন কারো সঙ্গে যে মেয়েটা/ছেলেটার ব্যাপারে ভালো জানে।

ধরেন কাউকেই পাচ্ছেন না, যে মেয়েটা/ছেলেটার ব্যাপারে ভালো জানে। এক্ষেত্রে কী করবেন?

অবশ্যই এমন কোনো সিদ্ধান্তে আস্থা রাখবেন যিনি অভিজ্ঞ (কনসিকোয়েন্স সম্পর্কে জানে)

দুই.

আপনি একটি ল্যাপটপ কিনবেন।

কার সিদ্ধান্তে আস্থা রাখবেন?

-নিশ্চয়ই আপনার পরীক্ষিত সৎ দক্ষ ফ্যামিলি ডাক্তারের সিদ্ধান্তের ওপর নয়। অবশ্যই এমন কারো সিদ্ধান্তে আস্থা রাখবেন যার ল্যাপটপের নলেজ ভালো।

এখন ১০ জন সৎ, নীতিবান চিকিৎসক বলছেন, ল্যাপটপের বস হচ্ছে ACER আর একজন কম্পিউটার সায়েন্সের লম্পট মার্কা প্রভাষক বলছেন – বেস্ট ল্যাপটপ হচ্ছে অ্যাপল। এক্ষেত্রে কী করবেন? নীতিবান, সৎ চিকিৎসকদের কথা শুনবেন নাকি লম্পট প্রভাষকের? একের সিদ্ধান্তে চলবে না গণতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত হবে?

-অবশ্যই কম্পিউটার সায়েন্সের প্রভাষকের। উনি লম্পট, সেটি অন্য প্যারামিটারে। কিন্তু কম্পিউটারের ভালোমন্দ যাচাইয়ের সঙ্গে লাম্পট্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব গণতন্ত্র এখানে অচল।

তিন.

আপনার অফিসের জন্য একটি আইফোন কিনবেন। আপনার বিভাগীয় প্রধান বস অতীব নীতিবান সৎমানুষ। কিন্তু উনি আইফোনের ‘আই”ও বুঝেন না।

অন্যদিকে আপনার জুনিয়র স্টুডেন্ট/ক্লার্ক আইফোনের হেড মাস্টার। আইফোন দুনিয়ার সব খোঁজ ওর নখদর্পণে।

তাইলে অফিসের আইফোন কার সিদ্ধান্তে কিনবেন?

বস ইজ অলরাইট বলে বিভাগীয়প্রধানের সিদ্ধান্তে কিনবেন যিনি আইফোনের আই ও বুঝেন না?

-অবশ্যই না।

তাইলে মূলত সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হবে?

কোনো কোনো বিষয় জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেবেন বা দেবেন?

সিদ্ধান্ত দেয়া বা নেওয়া হয় চারটি “সি” এর ওপর ভিত্তি করে।

একঃ Complete & Concrete Information

সিদ্ধান্ত বা মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ইনফরমেশান।

যে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চাওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারটির What, Which, When, Where, Why & How এই ছয়টা টপিক অথবা Strength, Weakness, Opportunity & Threat (SWOT Analysis) এই চারটা দিকের পূর্ণ নলেজ না থাকলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত নয়। আর যদি দেয়া হয়, সেই সিদ্ধান্ত ভুল হতে বাধ্য।

দুই, Commitment

আগামী মাসের অমুক দিন অতজনকে নিয়ে অমুক জায়গায় একটা অফিশিয়াল ট্যুর করবেন।

কোন দিন?

কত জনকে নিয়ে?

কোথায় ট্যুর করবেন?

এই সিদ্ধান্তগুলো আপনি একা দিলে অন্যদের মনঃপূত না-ও হতে পারে।

সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে ভাববেন, যে সিদ্ধান্তটি নিতে/দিতে যাবেন সেটি কি আপনি একা বাস্তবায়ন করতে পারবেন?

নাকি অন্যদের কমিটমেন্টও লাগবে?

অন্যদের কমিটমেন্ট যদি লাগে, সেক্ষেত্রে আপনি একা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না।

যাদের কমিটমেন্ট দরকার, তাদের মতামত নিতে হবে।

তিন, Concern

আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের অনারারিয়াম বাড়ানো/কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, কোনো ব্যক্তিকে অর্গানাইজেশন থেকে বাদ দিতে বা ইনক্লুড করতে যাচ্ছেন বা অর্গানাইজেশনের বিজনেসের জন্য বড় ধরনের কিছু কিনতে যাচ্ছেন বা বিভিন্ন লেভেলের পার্টিসিপেন্ট আছে (ভিআইপি থেকে সাধারণ স্টুডেন্ট) এমন কোন ট্যুরে আবাসন বা হোটেল বুকিং এর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।

এসব সিদ্ধান্তের ইম্প্যাক্ট সবার ওপর পড়বে এবং সবাই এই ব্যাপারে কনসার্নড।

ডিসিশনের ইফেক্ট অন্যদের ওপর, অর্গানাইজেশনের ওপর, মানুষের ওপর, কতটা প্রভাব ফেলবে এসব বিবেচনা করে আপনাকে চিন্তা করতে কার কার সঙ্গে পরামর্শ করলে সিদ্ধান্তটি বাউন্স ব্যাক করবে না।

আবার সিদ্ধান্তটি যদি এমন হয় যে আপনি আপনার অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি হয়ে অন্য একটা অর্গানাইজেশনের প্রোগ্রামে গিয়ে লেকচার দেবেন।

এখন লেকচার বাংলায় না ইংরেজিতে? শুধু বলবেন নাকি পাওয়ার পয়েন্টে দেখাবেন?

কী বলবেন কতটুকু বলবেন এসব ব্যাপার নিয়ে অন্যদের কনসার্ন খুবই কম। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার মত করেই ডিসিশন নিতে পারবেন।

চার, Constraint (Time constraint) সময়ের সীমাবদ্ধতা

যেসব ডিসিশন খুব তাড়াতাড়ি, ত্বরিত গতিতে নিতে হয়, এগুলোর জন্য বেশি পরামর্শ করার সুযোগ থাকে না, পরামর্শ করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

রিসেন্ট একটা উদাহরণ দিই।

ধরেন আপনি একটি অফিশিয়াল ট্যুর আয়োজন করছেন সুন্দরবনে। এক জুনিয়র সাবর্ডিনেটকে পাঠানো হয়েছে এই ট্যুরের ফরোয়ার্ড টিমে। আগে থেকে সিদ্ধান্ত ছিল আপনারা মোংলা বন্দর দেখে মোংলা থেকে লঞ্চে উঠবেন।

কিন্তু আপনার জুনিয়র সাবঅর্ডিনেট মোংলা বন্দরে গিয়ে দেখলেন, আপনারা যেই লঞ্চে যাবেন সেই লঞ্চ নোঙর করা আছে খুলনাতে লঞ্চঘাটে। আবার আপনাদের খাবারদাবারের বাজার সদাই করা হবে – সেটাও খুলনা থেকে। খুলনা থেকে লঞ্চ মোংলায় এলে মোংলায় এত বিশাল মাপের বাজার করার মতো বড় কোনো বাজার নেই।

এক্ষেত্রে প্রি-ডিসাইডেড ওয়েতে কাজ করতে হলে খুলনা থেকে বাজার করে সেটা সড়কপথে নিয়ে আসতে হবে মোংলায়, যেটা খুবই অসুবিধাজনক হবে।

আবার আপনার সাবঅর্ডিনেট মংলায় গিয়ে দেখলেন বন্দরটা মোটেই আকর্ষণীয় না যে এটা না দেখলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

এদিকে সবার সঙ্গে বা বসের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবার ও সময় নাই। বাস অলরেডি খুলনার পথে।

এক্ষেত্রে তিনি কী করবেন?

অবশ্যই চূড়ান্ত অটোক্রেটিক সিদ্ধান্ত দেবেন যে মোংলায় নয়, সোজা খুলনায় আসেন।

আর এই সিদ্ধান্তই সবার মানতে হবে।

ডিসিশন মেকিং মডেল মূলত ৩ প্রকার। এই তিনটাকে ডিসিশন মেকিং মডেল বলা হয়।

১. Autocratic – স্বৈরাচারী

২. Collaborative/Consultative – পরামর্শভিত্তিক

৩. Group – গ্রুপভিত্তিক

ডিসিশন মেকিং তিন প্রকার মানে এই নয় যে, একজন লিডারকে সব সময়ের জন্য এই তিন প্রকারের একটি নির্দিষ্ট প্রকারেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

বরং এর মানে হচ্ছে লিডার সিচুয়েশন এনালাইসিস করে কোন সিচুয়েশনে কোন মডেলে ডিসিশন দেবেন সেটা নির্ধারণ করবেন।

১) Autocratic model অর্থাৎ ডিসিশন নেবে লিডার নিজে এবং সেটা জুনিয়রদের থেকে মিনিমাম অথবা কোনো পরামর্শ না নিয়েই। এর দুটি ভাগ:

A1: জুনিয়রদের সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ না করেই ডিসিশন নেওয়াকে A1 পদ্ধতি বলে।

A2: দুই একজন জুনিয়র এর সঙ্গে নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যাপারে পরামর্শ করবেন লিডার, কিন্তু ডিসিশন সম্পূর্ণ নিজের এবং জুনিয়রদের পরামর্শ তার ডিসিশনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করবেনা।

২) Consultative model: অর্থাৎ ডিসিশন নেবেন জুনিয়রদের সঙ্গে পরামর্শ করে।

এরও দুটি ভাগ:

* C1 মডেলে লিডার প্রত্যেক জুনিয়রের সঙ্গে ইন্ডিভিজুয়ালি পরামর্শ করে। পরামর্শ অনুযায়ী নিজে থেকে ডিসিশন দেয়া।

*C2 মডেলে লিডার সব জুনিয়রের সঙ্গে একসঙ্গে পরামর্শ করে, সবাইকে একসঙ্গে জড়ো করে। সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়।

৩) Collaborative model (G) :

*এই মডেলে লিডার ও জুনিয়র সবাই মিলে একসঙ্গে বসে আলোচনার রেজাল্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়, লিডারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হতেও পারে, অন্য সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

ডিসিশন মেকিংয়ের এক এক মডেলকে এক একসময় বেছে নেন দক্ষ লিডাররা। কখনোই এক মডেল ব্যবহার করা দক্ষ লিডারের কাজ নয়। কোন সময় কোন মডেল্টি ব্যবহার করবেন, তা ডিপেন্ড করে কিছু ফ্যাক্টরের ওপর।

যেমন : (4 C)

1. Complete Information: লিডারের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য থাকলে তিনি A1 মডেলে এ যেতে পারেন। ইনফরমেশন কিছুটা ভেরিফিকেশনের দরকার পরলে A2।

তবে ইনফরমেশন গ্যাপ থাকলে অবশ্যই C1/C2 /G মডেলে যাওয়া উচিত

2. Commitment: সাবঅর্ডিনেটদের কমিটমেন্ট, স্কিল, নির্ভরযোগ্যতা, সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা ভালো হলে C1, C 2 মডেলে যাওয়া যায় নিমিষেই।

3. Concern: ডিসিশনের ইফেক্ট সাবঅর্ডিনেটদের ওপর, অর্গানাইজেশনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে এসব বিবেচনা করে লিডারকে চিন্তা করতে হবে যে কোনো মডেল ব্যবহার করবেন। যেমন ধরেন, লিডারের ডিসিশন যদি এমন হয় যে জুনিয়র আর কর্মীদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, তবে A1 অথবা A2 মডেলে না গিয়ে C1/C2/G1 মডেলে যাওয়া ভালো।

4. Constraint (Time constraint) যেসব ডিসিশন খুব তাড়াতাড়ি, ত্বরিত গতিতে নিতে হয়, এগুলোর জন্য Autocratic মডেলই বেস্ট।

সূত্রঃ jugantor