রাজারহাটের তরুণ ফ্রিল্যান্সার নাহিদ, হতে পারে অনুকরণীয়

রাজারহাটের তরুণ ফ্রিল্যান্সার নাহিদ, হতে পারে অনুকরণীয়

আসাদুজ্জামান এইম রতন, সিনিয়র সহ- সম্পাদক

২০১০ সালে মায়ের কাছে অনেকবার বায়না ধরে একটি জাভা প্রোগ্রাম এর সিমফোনী কোম্পানির এফটি টেন মডেলের একটি মোবাইল হ্যান্ডসেট ক্রয় করে এক কিশোর। কিশোর মনের সখের বশে কেনা মোবাইল দিয়ে ফেইসবুকিং, গানশোনা, গেমিং, ছবি তোলা ছিলো কিশোরটির কাজ। কিন্তু কে জানতো এই মোবাইলটিই হবে তার জন্য আশীর্বাদ।

ফেইসবুকিং করার মাধ্যমে পরিচয় হয় কিছু গ্রুপের মেম্বারদের সাথে। গড়ে উঠে সখ্যতা, অভিজ্ঞতা বিনিময়। তাদের পরামর্শেই ফেইসবুক মার্কেটিং শুরু করে কিশোরটি। সেই থেকে পথচলা শুরু।
প্রথম যেদিন ৩০০ টাকা আয় হয় এই মার্কেটিং থেকে তার যে কি আনন্দ! বলছিলেন কিশোর এর মা মোছাঃনুরবানু বেগম। পুরো ১ টি বছর গড়ে ৮০০০ – ১০,০০০ টাকা আয় করতো সে এভাবেই।

পরবর্তীতে আবারও পরিচয় ঢাকাস্থ এক বড় ভাইয়ের সংগে, এবার তার পরামর্শে গুগল আ্যাডসেন্স, অডিয়েন্স টার্গেট করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর ঢুকানোর কাজ শুরু করে কিশোরটি। একাজেও ভালো সফলতা আসা শুরু করে। তবে মজার ও অনেকখানি আশ্চর্যের বিষয় হলো এই কাজগুলিও সে করতো শুধুমাত্র ওই মোবাইল হ্যান্ডসেট দিয়েই।

শেষ অবধি, ২০১৬ সালে নিজের উপার্জিত টাকা ও বাড়ি থেকে কিছু টাকা নিয়ে তরুণটি কিনে ফেললো একটি কম্পিউটার। ওহ হ্যা সে তখন টগবগে তরুণ।শুরু হলো নতুন দিগন্তের স্বপ্নযাত্রা। 
এবার আ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ ইউটিউবার হিসেবে, গুগল আ্যাড সেন্সসহ আরও কিছু অনলাইন কাজ শুরু করে সে। যা থেকে বর্তমানে সে প্রত্যেক মাসে গড়ে ১০০০ – ১২০০ ডলার উপার্জন করে।

এতক্ষণ যে কিশোর থেকে তরুণ হওয়া ছেলেটির গল্প বলছিলাম। তার পুরো নাম নাহিদ হাসান রুমন। বয়স ২২ বছর ২ মাস ৭ দিন। রাজারহাট উপজেলার, সদর ইউনিয়নের মেকুরটারী গ্রামের মোঃ আলাউদ্দিন এর একমাত্র ছেলে নাহিদ। তার এক বড় বোন আছে।
নাহিদ এর সংগে গল্প করে শোনা যায়, নেট স্পিড কম, মাষ্টার কার্ড ব্লকসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তেও সে কখনও পিছপা হয়নি। কাজ করে গেছে দীর্ঘসময় ধরে। তাই পেয়েছেন সফলতা।

নবাগত আগ্রহী ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নাহিদ বলেছে ধৈর্য্য, ইচ্ছাশক্তি এবং সততা বড় ফ্যাক্ট এ পেশায়। কারণ আমাদের সারারাত জেগে কাজ করতে হয়, যা সবাই পারেনা। আবার অনেক ক্লাইন্ট আ্যাডভান্স পেমেন্টও দেয়। তাদের সাথে অসততামুলক কোন আচরণ করলে পরবর্তীকালে মার্কেটে কাজ পাওয়াটা দূরহ বলে নাহিদ।

শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার, ১টি নেট কানেকশনই পারে এ পেশায় সফলকাম হতে। নাহিদ বলে আমি সকল কাজ গুগল ও ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে শিখেছি কারও সহযোগিতা ছাড়াই। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার উপরও গুরুত্ব আরোপ করে সে।

নাহিদ এখন সরকারী মীর ইসমাঈল হোসেন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শেষবর্ষে পড়ছে। 
তার স্বপ্ন একজন বড় মাপের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া। ডিজিটাল বাংলাদেশের হয়ে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করা। আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করা, যেমন সে হাসিমুখ ও আমরা নামক একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন এ রয়েছে।

নাহিদ এর সোজাসাপ্টা কথা সে কখনও চাকরি করবে না। আমি আত্মনির্ভরশীল, স্বাবলম্বি ও স্বাধীন। আমি মুক্ত পেশা ফ্রিল্যান্সিং ভালোবাসি, লালন করি!

আমরা এরকম হাজারও উদ্যমী নাহিদকে দেখতে চাই। যারা কিনা চাকুরি নামক সোনার হরিণ এর পিছনে না ছুটে এগিয়ে নিয়ে যাবে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে, রাজারহাটকে এই প্রিয় আগামীর বাংলাদেশকে।।