মানবিক মানুষ হওয়ার প্রত্যয়ে; কৌতূহল ও সঠিক তথ্য

মোছাঃ নুসরাত জাহান :

কর্পোরেট এই দুনিয়ায় কর্মব্যস্ততাময় জীবনে আমরা ১টা দিন ছুটি পেলেই হাফ ছেড়ে বাচি, উল্লাসিত হই। মনের ভেতর অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ এর বাইরে নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আনন্দটা আরও প্রবল মাত্রায় কাজ করে। ৫ম শ্রেণীতে ক্লাস চলছে, লাস্ট আওয়ার। এমন সময় নোটিশ এলো আগামীকাল স্কুল ছুটি। সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। মেধাবী শিক্ষার্থী সাবিহা কৌতুহল বশত প্রশ্ন করলো “কিসের ছুটি ম্যাডাম?” ম্যাডাম উত্তর দিল মে দিবসের। কৌতহলী মনে আবার প্রশ্ন জাগলো মে দিবস কি? প্রশ্ন করতে যাবে এমনি সময়ে ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো। অমনি যে যার মতো হুরোহুরি করে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু ছোট্ট সাবিহার মনে প্রশ্ন থেকেই গেল। সহপাঠী তাসফিয়া বলে উঠলো “ধুর, এত জেনে কি করবি! তার চেয়ে ছুটি পেয়েছিস আনন্দ কর।” তারা দুজনেও ব্যাগ নিয়ে যে যার বাড়ীর দিকে রহনা দিলো। ছোট্ট শিশু সাবিহার মনের কৌতুহল কিছুতেই নিবারণ হচ্ছে না। বাড়ী ফিরলেই মা হাত-মুখ ধুয়ে খেতে ডাকলেন। খেতে এসে মাকে বললো “জানো মা ‘মে’ দিবসের জন্য কাল আমাদের স্কুল বন্ধ। আচ্ছা মা, মে দিবস কি?” শিক্ষিত মা মোছাঃ মিজনু বেগম। সন্তানের এরকম কৌতুহল আর প্রশ্ন করাটাকে তিনি নিজেও ভীষন পছন্দ করেন। সব সময় সন্তানের সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। মা বললেন, “মে দিবস হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।” সাবিহা: শ্রমিক কাদের বলে? মা: যারা পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করে অর্থাৎ কাজ করে তাদেরকেই শ্রমিক বলে।

সাবিহা: তাহলে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে যারা চাকুরি করে তারা সবাই কি শ্রমিক? মা: না মা, শ্রমিক শুধু তাদেরকেই বলা হয় যারা সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় কর্মরতদের অধীনে কাজ করে। সাবিহা: শ্রমিক দিবস কেন পালন করা হয়? মা: অনেক অনেক আগে অল্প মজুরিতে শ্রমিকদের দীর্ঘক্ষণ কাজ করানোর একটা প্রচলন ছিল। একেক জন শ্রমিককে দিনে ১২-১৮ ঘন্টাও কাজ করতে হতো।

মতবিনিময় সভা
মতবিনিময় সভা

এরই প্রতিবাদে ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকদের আন্দলন এবং পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষে পুলিশ সহ ১০/১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শ্রমিকদের এই আত্নউৎসর্গ-ই দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলে। সাবিহা: তখন থেকেই কি শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে আসছে? মা: না, সেটা আরও পরে হয়। হে ম্যাসাকারের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে সবখানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারড্যামে সমাজতন্ত্র পন্থীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া প্রস্তাব আকারে গৃহিত হয়। সেই সভাতেই বিশ্বব্যাপী প্রতি বছরের ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে উৎযাপনের ঘোষনা দেওয়া হয় এবং শ্রমিকদের এদিন সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ন্যায্য মজুরি এবং আট ঘন্টা কর্মঘন্টার শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর ধীরে ধীরে এই দিবসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সাবিহা: আমাদের দেশেও কি তখন থেকেই দিনটি পালিত হয়? মা: আমাদের দেশ তো সৃষ্টি হয় তার অনেক পরে।

১৯২৩ সালে প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে দিনটি পালিত হয়। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের দেশে দিনটি উৎযাপিত হয়ে আসছে। আর সেসময় হতেই দিনটি সরকারী ছুটির দিন। সাবিহা: ও আচ্ছা, এবার বুঝলাম। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মা। মা: যাও এবার গিয়ে বিশ্রাম নাও।

মায়ের কাছে ‘মে দিবস’-এর ইতিহাস জানার পর থেকেই তা দাগ কেটে যায় ছোট্ট শিশুটির কোমল মনে। শ্রমিক শ্রেনির প্রতি বেড়ে যায় শ্রদ্ধাবোধ, জেগে ওঠে সহানুভূতি। আর মানবিক মানুষ হওয়ার প্রত্যয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যায় ছোট্ট সাবিহা।

[,বি.দ্র: গল্পটি বিভিন্ন বই, পত্রিকা, ওয়েব জার্নাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে লিখেছি। ভুল, ত্রুটি কিংবা কোন মতামত থাকলে জানাবেন।]