কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যেরবাজার

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যেরবাজার

হুমায়ুন কবির সূর্য্য :
কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যেরবাজারে ঘুম নেই কারিগরদের চোখেমুখে। এখানে দিনরাত ধরে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। বাঙ্গালী হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আনন্দ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূঁজাকে কেন্দ্র করে এই গ্রামের সর্বত্রই শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। জেলার প্রয়োজন মিটিয়ে বাইরের জেলার মানুষরাও ছুটে আসছেন এই গ্রামে তাদের পছন্দের ঠাকুর কিনতে। এই শিল্পে জড়িত লোকজন দিনরাত পরিশ্রম করে কিছুটা লাভের মুখ দেখে খুশি।

সরজমিন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যের বাজার ঘুরে দেখা হয়। জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রামে শুরু হয় প্রতিমা তৈরীর কাজ। বর্তমানে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার এই শিল্পের সাথে জড়িত। তাদের কারণে আরো দুই শতাধিক পরিবারে জুটেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। মালাকাররা রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছোটবড় গ্যারেজের মধ্যে নির্বিগ্নে সম্পন্ন করছেন প্রতিমা তৈরীর কাজ। প্রতিমা তৈরী করার মধ্যেই বিভিন্ন জনের কাছে অর্ডার পেয়ে ইতিমধ্যে প্রায় নব্বইভাগ প্রতিমা বিক্রি হয়ে গেছে। এখনো লোকজন আসছেন। প্রতিটি প্রতিমা নি¤েœ পনের হাজার থেকে উপরে ছাব্বিশ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এবারে প্রতিমার গ্রাম বৈদ্যের বাজারে দুশোর অধিক প্রতিমা তৈরী হয়েছে বলে মালাকাররা জানান।

কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যের বাজার
কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরীর গ্রাম বৈদ্যের বাজার

স্থানীয় মালাকার বিপিন চন্দ্র রায়, সুধাচন্দ্র বর্মণ ও বাবুল চন্দ্র বর্মণ জানান, এখানে বিদেশী নামে স্থানীয় এক লোক ভারতে গিয়ে প্রথমে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেখেন। সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈদ্যের বাজারে এসে শুরু করেন রেডিমেট প্রতিমা তৈরীর কাজ। এরপর তার সুনাম ছড়িয়ে পরলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা তৈরীর জন্য ডাক পান। প্রথম কয়েক বছর মন্ডপে মন্ডপে গিয়ে তিনি প্রতিমা তৈরীর কাজ করতেন। ক্রমে তার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈদ্যের বাজারে স্থায়ীভাবে রেডিমেট প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু করেন তিনি। এই কাজে মজুরী বেশি দেখে অনেকে তার সাথে যুক্ত হন। এরপর যারা তার কাছে কাজ শেখেন তারাই এখন মালাকারের কাজ করছেন।
বর্তমানে এই এলাকায় ৬০/৭০ পরিবার এই কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ঠাকুর তৈরীর কাজটিকে তারা নিয়ে গেছেন অনন্য এক শিল্পের মর্যাদায়। ফলে সুদূর দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে দূর-দূরান্তের মানুষ এখানকার তৈরী প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবছর বাড়ছে চাহিদা। ভাল মানের প্রতিমা দরকার হলেই মানুষ প্রথমে বৈদ্যের বাজারে ছুটে আসছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বি লোকজনের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে এই গ্রামটির নাম।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবি বোস জানান, কুড়িগ্রামে বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা তৈরীর কাজ করা হয়। এরমধ্যে রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজারে সব থেকে বেশি ঠাকুর তৈরী করা হয়। তাদের মানও ভাল। তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় এবার ৫২০টি পূঁজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সার্বজনিন পূঁজাকে উৎসবে রুপ দিতে অধির আগহে অপেক্ষা করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে কোনরুপ বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই শারদীয় দুর্গোৎসব পালন হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনিন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখানে জাতি ধর্ম বর্ণ সবাই আমরা সম্মিলিতভাবে এই উৎসবে মিলিত হই। পূঁজার প্রস্ততি বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে। বরাবরের মত মন্ডপগুলোতে সরকার সহযোগিতা করবে। তারা যাতে নির্বিগ্নে তাদের উৎসব পালন করতে পারে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সজাগ আছে।