তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনা রেলপথ নাজুক

তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনা রেলপথ নাজুক

ফজলে ইলাহী স্বপন :

তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনা রেলপথের জীর্ণদশা। কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথের টগরাইহাট রেল স্টেশনের কাছে বড়পুলের পাড় নামক স্থানে রেলের একটি সেতুর (১৭জে/৪৫৫-০২) পিলার দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। কুড়িগ্রাম থেকে আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ায় সেতুটির স্থায়ী সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রামবাসীর শঙ্কা রেলপথ ও সেতু দ্রুত সংস্কারের অভাবে যেন বন্ধ হয়ে না যায় কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি।

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা থেকে জেলা সদর হয়ে তিস্তা ও রংপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ থাকলেও নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে রেল যোগাযোগ ত্রুটিপূর্ণই থাকছে। মাঝে মধ্যেই কুড়িগ্রাম-রমনা রুটে ছোটোখাটো ট্রেন দুর্ঘটনা লেগে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে রেল যোগাযোগ। অপরদিকে কুড়িগ্রাম-তিস্তা রুটেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসসহ’ লোকাল ট্রেনগুলো। ঢাকা থেকে তিস্তা পর্যন্ত দ্রুতগতিতে আন্তঃনগর ট্রেনটি চলাচল করলেও তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত মাত্র ২০ কিলোমিটার রেলপথে সময় লাগছে অন্তত তিনগুণ বেশি।

তিস্তা থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের বেহাল দশার কারণে বেশ ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। আর সময়মতো ট্রেন যাতায়াত না করায় নানা ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রেললাইনের স্লিপার, পাথর এবং কোনো কোনো স্থানে মাটি ও গাইড ওয়াল সরে গেছে। ফলে নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক কম গতিতে ট্রেন চলাচল করছে। কুড়িগ্রাম থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত মাত্র ৩৩ কিলোমিটার পথ যেতেই সময় লাগছে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা।

কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, তিস্তা-কুড়িগ্রাম-রমনাবাজার সেকশনের ৫৬ কিলোমিটার রেলপথে আটটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথটি ব্রিটিশ আমলের এবং কুড়িগ্রাম থেকে রমনা বাজার (চিলমারী) পর্যন্ত রেলপথটি ১৯৬৮ সালে নির্মিত হয়। তবে দীর্ঘ সময়ে লাইনের সংস্কার না হওয়ায় নষ্ট স্লিপার ও পাথরের অভাবে রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাষ্টার বাবু আল রশীদ জানান, বর্তমানে জেলাবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি সুষ্ঠুভাবেই রংপুর-পার্বতীপুর হয়ে ঢাকা যাতায়াত করছে। পাশাপাশি গাইবান্ধা-বগুড়া হয়ে ঢাকা যাতায়াতকারী ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিতে সাটল ট্রেনের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়ায় দুটি আন্তঃনগরের সুবিধা পাচ্ছে কুড়িগ্রাসবাসী। এছাড়াও লোকাল ট্রেন দুইবার কুড়িগ্রামে যাতায়াত করছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর হতে সকালে একটি ট্রেন ‘৪২২ আপ’ নামে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশনে গিয়ে ‘৪১৫ ডাউন’ নামে সেটি আবার তিস্তা পর্যন্ত ফিরে যাচ্ছে। এই ট্রেনটিই আবার তিস্তা থেকে ‘৪১৬ আপ’ নাম ধারণ করে পুনরায় কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশনে যায় এবং ‘৪২১ ডাউন’ নাম ধারণ করে রমনা স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে পার্বতীপুর ফিরে যায়।

সূত্র আরো জানায়, কুড়িগ্রাম হতে রংপুর মাত্র ৫০ কিলোমিটার সড়কপথের বাস ভাড়া ৮০ টাকা। কিন্তু ট্রেনে এই ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। আর রমনা থেকে রংপুর রেলপথের ভাড়া মাত্র ২৫ টাকা। ফলে বিলম্ব হলেও সাধারণ যাত্রীরা নিরাপদে ও ট্রেনে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আবেদীন ডলার জানান, দীর্ঘদিনের অবহেলিত কুড়িগ্রাম রেলপথ ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। কুড়িগ্রামবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় আমরা আনন্দিত। তবে রেলপথটির দ্রুত সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। ত্রুটিপূর্ণ রেলপথের কারণে যেন বন্ধ হয়ে না যায় ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’।

বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক জানান, টগরাইহাট রেল স্টেশনের কাছে রেলের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির সংস্কার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রাম-তিস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেললাইন দিয়ে ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলতে পারছে না। আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করায় ন্যূনতম যাতে ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে সেজন্য রেলপথ সংস্কারের একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম-রমনা ৩৩ কিলোমিটার রেলপথটি নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার থাকায় সময় বেশি লাগছে। এর ফলে ট্রেনের সময়সূচি কোনোভাবেই ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

সুত্র:ইত্তেফাক