ঢাকার সিআরপি হাসপাতালে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু রাইয়ানকে নেয়া হচ্ছে

ঢাকার সিআরপি হাসপাতালে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু রাইয়ানকে  নেয়া হচ্ছে

এজি লাভলু:

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দূর্গাপুরের মায়ের আকুতি একটি হুইল চেয়ার শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় লেখালেখি হলে তা কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম এর নজরে আসে এবং তিনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি শিশু রাইয়ানের জন্য তিনি একটি হুইল চেয়ার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের জানজাগীর স্কুল মাঠে রাইয়ানের বয়সী ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, অন্য প্রতিবন্ধি ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে তখন রাইয়ান বাঁশের চাটাইয়ে পরে আছে আর তার নানীর কোলে ঠাই হচ্ছে।

তার পরিবার ও স্থানীয়রা বলেন মা লাকী বেগমের গর্ভে ৮ বৎসর আগে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে রাইয়ানের জন্ম হয়। জন্মগত জটিলতা নিয়ে মায়ের কোলে নয় বরং নানীর কোলে বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি।

৮ বছর থেকে শিশু রাইয়ানের ভাগ্যে জুটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।শিশুটির নানা-নানী জানান, ছাওয়াটা জন্মের পর থেকে অচল, মা লাকী বেগম লালন পালনে অক্ষম জামাই মিস্ত্রী, আরও দুই ছাওয়া পোওয়া আছে। বেটির ছাওয়া কি করমো ফেলে তো আর দিবার পাইনা।

আল্লাহ যতদিন ইয়েক বাচে রাখপে ততদিন হামরায় বুকের ধন করি মানুষ করমো। কোন চেয়ারম্যান, মেম্বার ছাওয়াটার জন্যে কিছু করি দেইল না, মেম্বার কয় ঐ হামার গ্রাম / ওয়ার্ডের ছাওয়া নোয়ায়, তাই কোন কার্ড বা ভাতা দেওয়া যাবান নয়।এ কটা হুইল চেয়ারের জন্য উলিপুর সরকারি হাসপাতাল, ইউএনও অফিস, কুড়িগ্রাম নিমতলা পঙ্গু হাসপাতাল পর্যন্ত গেছনু বাহে খালি সবাই কথা দেয় দেমো কিন্তু ঐ কথা দেওয়ায় শেষ, ছাওয়াটাক ফেলে দেমো। বাধ্য হয়া এলাকার শিক্ষিত বড় ছাওয়া গুলেক কইছং তোমরা সাংবাদিক দিয়া লেখায়া মোর এই ছাওয়াডার জন্য একটা হুইল চেয়ার ব্যবস্থা করি দেও। সেইটা লেখার পর শুনলাম হামার জেলার এসপি হুইল চেয়ার দিবে।

স্যার যদি ছাওয়াটার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হামার খুব ভাল হয়।দূর্গাপুর এলাকার তরুণ সমাজকর্মী ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠন অরন্য’র সদস্য বায়েজীদ ইসলাম বলেন, বাচ্চাটির কথা ও তার মা (নানী)র আকুতি দেখে আমরাই সাংবাদিক সহ বিভিন্নখানে সাহায্যের জন্য দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্ঠা চালাই।

ফেসবুক মেসেঞ্জারে ও মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম জেলা সভাপতি আবু জাফর সোহেল রানার মাধ্যমে কুড়িগ্রামের এসপি মহিবুল ইসলাম স্যার চেয়ার দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ও সাংবাদিক রানাকে চেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যও বলেন।

এখন জানতে পারলাম, ঢাকায় বসবাসরত কুড়িগ্রামের ভাইদের সংগঠন কুড়িগ্রাম সোসাইটি ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম চিশতী শাহিন কুড়িগ্রামের এসপি এর সম্মানে রাইয়ানকে ঢাকা সিআরপি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ব্যাবস্থা করাবেন পাশাপাশি ডাক্তার পরামর্শে দেহ উপযোগি হুইল চেয়ার এর ব্যবস্থা করাবেন। রাইয়ানের চিকিৎসা ব্যয় যা হবে তা তিনি বহন করবেন।

উদীয়মান সমাজকর্মী ও প্রবর্তন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাব্বির খান সায়েম শিশুটিসহ তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।রাইয়ানের চিকিৎসার জন্য পরিবার, স্থানীয় লোকজন মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি আবু জাফর সোহেল রানার হাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু অসহায় রাইয়ানের দায়িত্ব দিয়ে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব সরোয়ার-ই-আলম সরকার জীবন এবং কুড়িগ্রাম সোসাইটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সব কিছু করে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সোসাইটি ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম চিশতী শাহিন বলেন, আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু রাইয়ানের বিষয়ে কুড়িগ্রামের মানবিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান এর চেয়ার সহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পেরে আমরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি।

তিনি আরও জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সহকারি প্রেস সচিব সরোয়ার-ই-আলম সরকার জীবন শিশু প্রতিবন্ধি রাইয়ানের বিশেষ উন্নত মানের চেয়ার ক্রয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।সিআরপিতে কুড়িগ্রামের মারুফ চিকিৎসা সেবা নিয়ে গত ৩০-০১-২০২০ ইং তার পরিবার বাড়ি নিয়ে গেছে। এখানে চিকিৎসা ব্যায় প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।

শিশু রাইয়ানের চিকিৎসার ব্যয় ডাক্তার না দেখানো পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসা বাবদ যা ব্যয় হবে কুড়িগ্রাম সোসাইটি ঢাকা তা বহন করবে।কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বলেন, প্রতিবন্ধী শিশু রাইয়ানের জন্য চেয়ারসহ তার চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা করবো।