গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সাপ খেলা এখন শুধুই স্মৃতি-রাজারহাট বিডি

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সাপ খেলা এখন শুধুই স্মৃতি-রাজারহাট বিডি

স্টাফ রিপোর্টার :

কি সাপে দংশিলো রে, লখাইরে, বিধি কি হইলো রে। জনপ্রিয় এ গীতটি সাপ খেলা দেখানোর সময় বেদেদের মুখে শোনা যেত। যা পরবর্তীকালে গ্রাম বাংলার সবার মুখে মুখে ছিল।

সাপ খেলা পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাপের কাঁমড়ে প্রাণহাণির খবরো কম নয়। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই ,যেখানে সাপকে নিয়ে লেখা হয়নি।

সাপকে নিয়ে রচিত হয়েছে গান,গল্প, ছড়া, কবিতা,নাটক, উপাখ্যান প্রভৃতি। সেই বেহুলা নক্ষিণতরের পৌরাণিক কাহিনী কে না জানে,যা এক সময় গ্রামবাংলার মানুষের বিনোদনের খোরাক ছিল। সাপকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেও দ্বিধা করেনি চিত্র পরিচালকরা।

শুধু সাপকে নিয়ে নয়, বেদে কিংবা বেদে কন্যাকে নিয়ে কম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। উপমহাদেশে সারা জাগানো চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ নামে চলচ্চিত্রটি কেউ কি ভুলতে পেরেছে? না ভুলতে পারেনি।

নাগ নাগিনী, পদ্ম গোখরা, চন্দ্রাবতী,শঙ্খমালা রাজদুলালী এমনি শতাধিক চলচ্চিত্র সাপকে নির্মিত হয়েছে। সাপকে নিয়ে কি রচিত হয়নি। সাপ নিজে কি তা জানে,তাকে নিয়ে এতো আয়োজন।সাপের কাঁমড়ে প্রাণ গেছে একথা শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন ।

তবুও এক সময় সাপ খেলা দেখলে হুমড়ি খেত মানুষ । দল বেঁধে বেদেরা এসে যখন মাঠে মাঠে আখরা বসাতো এবং ডুগডুগি বাঁজিয়ে সাপ খেলা নিয়ে হাজির হতো। তখন কি আর করার আবাল বৃদ্ধ বনিতারা কাজ কর্ম ফেলে ছুটে যেত সাপ খেলা দেখতে।

শুরু হতো সাপ বেজীর মনমুগ্ধকর লড়াই। সাঁপুড়ে যখন বীন বাঁজিয়ে পা নাড়াতো আর সাপ বীনের সুরে মাতাল হয়ে ফোস্ ফোস্ শব্দ করতো,তখন কার না ভাল লাগতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এ দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। নতুন প্রজন্মের কাছে এ শুধু দুর অতীত।

এইতো কদিন হলো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয় সাপ ধরতে আসা জৈনক সাঁপুড়ের সাথে। তিনি নিজেকে কখনও ঢাকা, কখনও ভারত থেকে এসেছে বলে জানালেও তার আসল পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি জানান আমরা এখন আর সাপ খেলা দেখাই না।

শুধু সাপ ধরে বিক্রি করি। এক একটা সাপের বাজার মূল্য ৫,০০০ থেকে ১০,০০ টাকা পর্যন্ত। সাপের বিষ দিয়ে মূল্যবান ঔষধ তৈরি হয় বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান কুসংস্কার বশতঃ মানুষ সাপ মেরে ফেলার কারণে প্রানীটি আজ অস্তিত্ব সংকটে।

অথচ মানুষ জানে না সব সাপের বিষ নেই। রাজারহাট ফাজিল মাদরাসার জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের মতে অবাধে সাপ নিধনের ফলে ইদুরের উপদ্রব দিন দিন বেড়েই চলছে।