‘আমার গ্রাম আমার পরিবার’গ্রামই গ্রামের সুরক্ষাশক্তি-ড. তুহিন ওয়াদুদ

‘আমার গ্রাম আমার পরিবার’গ্রামই গ্রামের সুরক্ষাশক্তি-ড. তুহিন ওয়াদুদ

বিশ্বজুড়ে করেনানার ভয়াল থাবায় মানব জাতি আক্রান্ত। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। বাংলাদেশ সরকার তার সাধ্য মতো চেষ্টা করছে। সরকারের চেষ্টার সাথে যদি আমরা গণমানুষ যুক্ত হতে পারি তাহলে আমরা খুব সহজেই এই দুঃসময় পাড়ি দিতে পারব। গ্রামভিত্তিক বিচ্ছিন্ন শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করার জন্য একটি প্রস্তাবনা। পরীক্ষামূলক ভালো ফলও পাওয়া গেছে। গ্রামভিত্তিক সংকট দূর করা সম্ভব হলে একইভাবে শহরের সংকট দূর করা আরও সহজ হবে।

কার্যক্রম:

১. গ্রাম সুরক্ষা কমিটি গঠন। সর্বজনগ্রহণযোগ্য একজনকে আহবায়ক, একজনকে সদস্যসচিব করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীবাহিনী হবেন সদস্য। তরুণরা এ কাজে অগ্রণী শক্তি।

২. গ্রামটিকে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-বিদেশ কিংবা অন্য কোন জেলা থেকে নতুন করে কেউ এলে পাড়াভিত্তিক তার ওপর নজর রাখা।

৩. গ্রামে কারও মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা গেলে ভীত না করে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যদি কেউ করোনায় মারা যায় তার মৃত্যু পরবর্তী কাজে সহায়তা দেওয়া।

৪. গ্রামে সামান্য জমিও যাতে পড়ে না থাকে সে ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে গ্রামে বাড়ি বাড়ি মরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন সবিজর চারা এবং বীজ প্রদান করা। লক্ষ্য হচ্ছে- গ্রামে উৎপাদিত সবজি দিয়ে গ্রামের চাহিদা পূরণ করা।

৫. গ্রামবাসীকে করোনাবিষয়ক সচেতন করা।

৬. সামর্থ্যহীনের পাশে থাকবে সামর্থ্যবান।

কার্যপ্রণালী:

গ্রামে কয়েকটি পাড়া থাকে। পাড়াভিত্তিক দায়িত্ব দিয়ে অসহায়দের একটি তালিকা করতে হবে। সেই সাথে মুঠোফোন নম্বরসহ সামর্থ্যবানদের আরেকটি তালিকা করতে হবে। অসহায়দের তালিকা করার সময় পরিবারের সদস্যসংখ্যা চিহ্নিত করা চাই। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য অথবা এমন কাউকে দিয়ে তালিকা যাচাই করা যিনি/যারা বলতে পারবেন সে কোন সহায়তা পেয়েছে কিনা। সরকারের পক্ষে কিংবা কোন সংস্থার পক্ষে কেউ বড় কোন সহায়তা পেলে তাকে প্রথম ধাপে সহায়তা না দেওয়া।

সামর্থ্যবানদের মধ্যে যারা বেশি সহায়তা করতে পারবেন তাদের কাছে প্রথমে বিষয়টি বুঝিয়ে আর্থিক সহায়তা চাওয়া। দেশের খুব গরিব জেলাগুলো এবং চরাঞ্চলকেন্দ্রিক গ্রামগুলো বাদ দিলে সব গ্রামে এমন সংখ্যক সার্মথ্যবান আছেন যাদের যৌথ সহায়তায় গ্রামের একজন মানুষও না খেয়ে থাকবেননা। যতদিন চলবে এই সংকট ততদিন সার্ম্যবানেরা নির্দিষ্ট হারে মাসিক অর্থ প্রদান করবেন। অভাবজনিত যত সামাজিক অপরাধ দেখা দেবে তাতে কিন্তু কেউই ভালো থাকবেনা। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে সেই অপরাধগুলোও বন্ধ হবে। করোনা রোগের বিস্তার রোধেও এই সংগঠন এমন সহায়ক শক্তি হতে পারে যে এই শক্তিই গ্রামকে রাখতে পারবে সুরক্ষিত। যেসব গ্রামে সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যা কম সেসব গ্রামের জন্য সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিন/সাত দিনে দেশের শৃঙ্খলা:

একটি গ্রামে এই কার্যক্রম শুরু করলে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরবে। একযোগে সারাদেশ এই কার্যক্রম গ্রহণ করলে সাতদিনের মধ্যে দেশে ক্ষুধা এবং করোনা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কাজে সফল হওয়া সম্ভব।

পরীক্ষা ও ফলাফল:

উল্লিখিত প্রস্তাবনার আলোকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজার হাট উপজেলার বোতলার পাড় গ্রামকে আমরা বেছে নিয়েছি। সেখানে বোতলার পাড় সুরক্ষা কমিটি গঠন করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহাবুল আলমকে আহবায়ক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব এবং সরকারি কলেজের শিক্ষক প্রদীপ মিত্রকে সমন্বয়ক করে কার্যক্রম শুরু করি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা একশ দশটি পরিবারে প্রায় ১০ কেজি চাল, এক লিটার তেল আধা কেজি করে লবণ দিতে পেরেছি। চলছে গ্রামজুড়ে সবজি চাষের পরিকল্পনা। দীর্ঘমেয়াদে সংকট চললেও এ গ্রামের অতিদরিদ্র জনগণ অন্তত না খেয়ে থাকবেন না। করোনাবিষয়ক সচেতনতার কাজে নিয়োজিত এ সংগঠনের সকলেই।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব জেলা কুড়িগ্রাম। সেখানে একটি গ্রামে এ কাজ সম্ভব হলে দেশের অন্য যে কোন জেলায় যে কোন গ্রামে এ কাজ আরও সহজ হবে।

বিশেষ অনুরোধ:গ্রাম বিশেষে নতুন অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। উপস্থিত বুদ্ধিতে তা মোকাবেলা করতে হবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। পরিচালক, রিভারাইন পিপল।

০১৭৩৫৫৮০৭৫৯

wadudtuhin@gmail.com