চির অম্লান নীল ধ্রুবতারা
লুৎফর রহমান আশু,প্রধান শিক্ষক,রাজারহাট। ১২ আগষ্ট ২০১৭
আলমগীর কবির। একটি নাম। একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞে নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদন কারীর বিনম্র প্রকাশ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশী দূর এগোতে পারেনি, কিন্তু তাঁর শিক্ষালব্ধ অর্জিত জ্ঞানের গভীরতা অনেক বিশ্ব বিদ্যালয়ের শেষ ‘ডিগ্রি’ নিয়ে আসা শিক্ষিত ব্যক্তির তুলনায় ছিলো হাজার গুণ ঊর্ধ্বে। সদাহাস্যময়, উৎফুল্য ও নিরহঙ্কার স্বতঃস্ফুর্ততা ছিলো তাঁর ভূষণ। ব্যক্তি-উপলব্ধির মননশীল প্রগাঢ়তা মানব প্রেমের অগ্নিবীণায় সমর্পণ করেছে সে। ছাত্র জীবন থেকেই শুভ-সুন্দর ও কল্যাণ মূলক কাজে তাঁর ক্লান্তিহীন অংশ গ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। স্রোতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অন্তরময়তার সাথে। “যা আছে তাই সব কিছু নয় বরং এর থেকে আলাদা আঙ্গিক, সৃষ্টিতে নিয়ে আসা প্রয়োজন”-এ বিশ্বাস থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুনত্বের আহ্বান ছড়িয়ে দিয়েছে এই চির অম্লান নীলধ্রুবতারা। হাজার শব্দের ভিড়ে যেমন একটি শব্দ উঠে এসে ‘অপরিহার্য’ রূপে ‘সাহিত্য নিকুঞ্জে খেলা করে, তেমনি অজস্র বিচিত্র রাজারহাটবাসীর গ্রহ-পুঞ্জের ভেতর থেকে অনায়াসেই খুঁজে নেওয়া যায় চির সবুজ ‘আলমগীর’ নামের শুক তারাকে। উৎকৃষ্ট সংগঠক হিসেবে ও জনপ্রিয়তায় সে সকলের কাছে পেয়েছে সমান গ্রহণযোগ্যতা। সমাজের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত অসহায় গরীবদের জন্য তাঁর সাধ্যের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছে । আপামর সচেতন সমাজ, বিশেষ করে, এলাকার তরুণ সমাজ, অসহায় বিত্তহীন সম্প্রদায়, আজো তাঁর জন্য শূন্যতা অনুভব করে। প্রচন্ড শীত, কুয়াশাচ্ছন্ন রাত, গভীর অমাবস্যা, ঝড়, বৃষ্টি, তুফান, দাব-দাহ, বাধা-বিপত্তি কোন কিছুই তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি। অসাম্প্রদায়িক, নির্ভীক সত্যবাদী এ চিরতরুণ, সর্বসাধারণের জন্য তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ পত্রিকা ‘গ্রামান্তর’-নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ভিত্তি, রূপ-রস ও অলঙ্কারে, সম্পাদনার উত্তরীয়তে সুবিন্যস্ত করেছে। গঠনমূলক যে কোন কাজে সে ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তি। সবচেয়ে ঘৃণা করতো হলুদ সাংবাদিকতাকে।
এ চলার পথে হঠাৎ, একটি ঝড়ের সংকেত! আচমকা একটি বাজ্ পড়ার শব্দে সবাই চকিত, শিহরিত, স্তম্ভিত! পূরবীর বীণায় আর সুর বাজেনা। ছিঁড়ে গেলো সেতারের তার। রাজারহাটের প্রকৃতির-মানুষের অবিচ্ছেদ্য পবিত্র ‘প্রতিবাদী সৃষ্টিশীল লেখনীর প্রথম প্রহর’ আলমগীর কবির অভিমানে পৃথিবী ছেড়ে অকালে বিদায় নিল। কোনদিন ফিরে আসবে না। আর কাউকে ভালো সংবাদ লেখার কথা বলারও ফুরসৎ হবেনা তাঁর। ১২ আগস্ট ২০০৭ তারিখে সে ক্যানসারের কাছে হার মেনেছে।
“কোনদিন জাগিবে না আর-
জাগিবার অবিরাম গাঢ়-বেদনার ভার,
কোন দিন সহিবে আর।”
ও আমার বাল্যবন্ধু । পরামর্শ, খোলা-মেলা-আড্ডা, রাগ,ক্ষোভ, মিলন, সু-গভীর আন্তরিক পরামর্শ-এখন স্মৃতি মাত্র। বিষন্ন মেঘে ঢেকে যায় রাজারহাটের উজ্জ্বল সূর্য। হীমকুহেলির অন্তর রিক্ত। শোকার্ত, ব্যথাতুর, বসন্ত বাতাস। হৃদয়ের পাঁজড় ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে কান্নার ঢেউ। এভাবে অকাল বিরহ সিন্ধু মেনে নিতে মন চায়না। কষ্ট লাগে। বুকভরা বিচ্ছেদের অনল। চোখ ভিজে আসে। স্টেশনের পাশ দিয়ে, রেল লাইনের ধারে, আমার বাড়ির সামনে দিয়ে আঁকা-বাঁকা পথে হেঁটে যাওয়া সাংবাদিক আলমগীর কবির আজ শুধুই স্মৃতি। আল্লাহ ওর বেহেস্ত নসীব করুন।
রাজারহাটের সাংবাদিকতার রাজত্বে একটি উজ্জল নাম-“আলমগীর কবির”। তিনি তার দক্ষতা ও কর্মে সবার মনে রাজত্ব করছেন এখনো। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনোই আপোষ করেননি বলে এখনো সবার অন্তরাত্মায় সমানভাবে বিরাজমান। না, তিনি চলে যাননি! তিনি থাকবেন! অনন্তকাল ধরে থাকবেন আমাদের সবার মাঝে।