রাজারহাটে বন্যায় জনদূর্ভোগ চরমে…

রাজারহাটে বন্যায় জনদূর্ভোগ চরমে…

রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ আগষ্ট ১৯,০৬.৫৯।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বন্যায় জনদূর্ভোগের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ তিস্তা নদীর ভাঙ্গনরোধে ডাংরারহাট ৬নং ক্রস বাঁধটির ৩০ ফিট নদীগর্ভে বিলীনসহ বেরিবাঁধের একাংশ ধসে যাওয়ায় বিদ্যানন্দ ইউপির তিস্তা পাড়ের মানুষের বর্তমান নির্ঘুম রাত কাটছে।
সরজমিনে ছিনাই ইউপির রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে চুরে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে গত ১৩ আগষ্ট দিবাগত রাতে ধরলা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ছিনাই ইউপির কালুয়ারচর, চতুর্ভূজ, চর জয়কুমর, কিং ছিনাই, তালুয়া, রামরতন, পূর্বদেবত্তর, মহিধর এলাকার বেশিরভাগ পাকা ও কাঁচা রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট এবং মহাসড়ক প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন স্থান ধসে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বানভাসি মানুষজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও তাদের রেখে আসা ধান-চাল, আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবকিছু তছনছ করে বানের পানিতে ভেসে ও পঁচে গেছে।
ওইসব পরিবারের লোকজন বর্তমান পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের দূর্ভোগের যেন অন্ত নেই। নৌকা অথবা পিকআপ ভ্যানের শব্দ শুনলেই তারা ত্রাণের জন্য ছুটে আসে। অপরদিকে আকস্মিক বন্যায় উপজেলার সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত ছিনাই, বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপির বেশিরভাগ এলাকায় চলতি মওসুমে রোপনকৃত রোপা-আমন ক্ষেত, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে পঁচে ও মরে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। অত্র উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক পুকুর বানের পানিতে নিম্মর্জিত হয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় উপজেলার ৩২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কালুয়া এলাকার নাজেম আলী (৫৫), মোহাম্মদ আলী (৬১) ও জয়কুমর এলাকার জয়নাল আবেদীন (৬৫) বলেন, বাবাগো হামার ও হামারগুলার বাপ-দাদার জীবনে কোনদিন এদন বান দ্যাহি নাই। এহন বাড়িত আসি দেহি হামারগুলার ঘরত কিছুই নাই। সবকিছু বানের পানিত ভাসি গেইছে। বর্গা ও নিজস্ব জমি চাষ করে তাদের উৎপাদিত ফসল দিয়ে ৬ মাস পরিবার-পরিজনের খাবার চলত। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু হারিয়ে ওইসব পরিবারগুলোর মধ্যে বর্তমানে আহাজারি বিরাজ করছে। অপরদিকে বন্যার পানিতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়ে রোপা-আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার ষষ্টী চন্দ্র রায় বলেন, অত্র উপজেলায় ১১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমনের চাষ হয়েছে। বন্যায় ২০ হাজার বিঘা জমির রোপা-আমন এবং ৭৫ বিঘা জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। নতুন করে আর বন্যা না হলে এখনও কিছু জমিতে রোপা-আমন চাষ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বলেন, বন্যায় রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু করা হবে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে ডাংরারহাট ৬নং ক্রস ও বেরি বাঁধ ধস এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পানি সম্পদ মন্ত্রী মহোদয়সহ আছি, পরে কথা বলবো। এদিকে ছিনাই ইউনিয়নে ধরলা নদীর ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এবং বিদ্যানন্দ ইউপির ডাংরারহাট ক্রস বাঁধ ও বেরি বাঁধ এলাকা সমূহ গতকাল শনিবার পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *