আপনাদের জন্য আমিও জীবন দিতে প্রস্তুতঃ রাজারহাটে শেখ হাসিনা

আপনাদের জন্য আমিও জীবন দিতে প্রস্তুতঃ রাজারহাটে শেখ হাসিনা

রফিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ আগষ্ট ২০,০৯.৫৩।
দেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছে,
আপনাদের জন্য আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত- কুড়িগ্রামের রাজারহাটে -শেখ হাসিনা|
“বন্যায় যাদের ঘর বাড়ী বিনিষ্ট হয়েছে, তাদের ঘরবাড়ী নতুন করে দেওয়া হবে, ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ঢেউটিন, ধানের চারা, সার , বীজ ও আথি’ক সহায়তা প্রদান করা হবে। ভুমিহীনদের স্থায়ী ভাবে ঘরবাড়ি করে দেয়া হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার সব কিছু করছে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকার আপনাদের সরকার। আমার বাবা দেশের মানুষকে বেশী ভালবাসতেন। তাই তিনি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ও কল্যাণে আমিও জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আজ(২০ আগষ্ট) বিকালে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউপির পাঙ্গা রাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণের পূর্বে এক সুধীসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

তিনি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নিহত শিশুসহ অন্যদের আতœার মাগফেরাত কামনা করে বলেন পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। সবাইকে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে। আগামী মাস থেকে দেশের ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল তিন মাস দেয়া হবে। দেশে যেন খাদ্য ঘার্তি না হয় সে জন্য চাল আমদানীর উপর ২৮ ভাগ ট্যাক্স কমিয়ে ২ ভাগ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে ১৫ লক্ষ টন খাদ্য আমদানী করা হয়েছে। কাজেই কোন সংকট নেই। আমি ১৯৮১ সাল থেকে কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে ঘুরে বেড়িয়েছি। মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখেছি। তখন এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা লেগে থাকত। সরকারে না থেকেও আপনাদের পাশে ছিলাম। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এ জেলার জন্য অনেক উন্নয়ন কর্মসুচি নিয়েছি। যাতে করে গ্রামীন জনপদের মানুষগুলো ভাল থাকতে পারে। অল্প সময়ের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্যে উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলার মর্যাদা লাভ করে। এখন আর কেউ কুড়িগ্রামকে মঙ্গার জেলা বলে না। আমরা মাঝ খানে ক্ষমতায় ছিলাম না। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি আবারও দেশে ৪০ লাখ মে. টন খাদ্য ঘাতি। আমাদের চেষ্টায় দেশে আবারও ৩০ লাখ মে. টন খাদ্য আবারও উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম) এমপি, খাদ্য মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর আলী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম মোজাম্মেল। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী,পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিছুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলী, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গির কবির নানক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, এ্যাডভোকেট সফুরা খাতুন এমপি, রুহুল আমিন এমপি, এ কে এম মোস্তাফিজার রহমান এমপি, সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুনুর মো. আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কি. মি. দুরে বন্যায় বিধস্ত এলাকা ছিনাই ইউনিয়নের পাঙ্গা রাণী লক্ষ্মীপ্রিয়া স্কুল ও কলেজ মাঠে ত্রাণ বিতরণ এ অনুষ্ঠান বেলা ৩টার মধ্যে জনসভায় পরিনত হয়। বেলা ১২টা থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে স্বস্ফুর্তভাবে হাজার হাজার নারী-পুরুষ উপস্থিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে মাঠ ভরে রাস্তা ও পাশর্^বর্তী বিভিন্ন বাড়ির উঠানে অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে রাজারহাট হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করে। সেখান থেকে সভাস্থলে পৌছেন ৩ টা ২৩ মিনিটে। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৩ মিনিট তার সরকারের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন। সভা শেষে ২১ জন বন্যার্ত নারী ও পুরুষের হাতে সরাসরি ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর পর তালিকাভূক্ত ক্ষতিগ্রস্থ ৯শ’ ৭৯ জনকে ওই প্যাকেজের ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি চিড়া, আধা কেজি মুড়ি, তেল ১ কেজি, মোমবাতি ও দেয়াশলাই এক ডজন করে ছিল।

প্রধানমন্ত্রী এনজিওদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা ঋণ দিয়েছেন, দয়া করে বন্যাকবলিত মানুষদের অত্যাচার ও জুলুম করবেন না। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন আমার উপর আস্থা আছে? সবাই তার কথায় হাত তুলে সাড়া দেয়। ‘আপনাদের ধর্য্য ধরতে হবে। আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। বিশ^াস রাখতে হবে। বাংলার মানুষের জন্য আমি যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত।’

তিনি আরও বলেন, এটা আগষ্ট মাস। এ মাসে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার ছোট বোন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। জিয়া তখন একজন মেজর ছিল। জাতীর পিতা তাকে মেজর জেনারেল করেন। কিন্তু তিনি অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে। এমনকি আমি ও আমার ছোট বোন যেন দেশে আসতে না পারি এ জন্য পাসপোর্ট রিনু করতে দেয়নি।

তিনি সাম্প্রতিক সময়ে কুড়িগ্রামের ভয়াবহ বন্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তারাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। আমি দিনাজপুরের বন্যাদুর্গত এলাকা দেখে এবং ত্রাণ বিতরণ করে আসলাম। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীন সড়ক, মহাসড়ক ও বাঁধের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। একই সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্র ও ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামতের কাজ করা হবে। আপনারা যারা স্থানীয় তাঁরা দেখে নেবেন কাজ যেন ঠিকমত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ধানের চারা বিতরণ করা হবে। চারার ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি। সার, বীজ সব দেয়া হবে। দেশকে ভিক্ষুক মুক্ত কর্মসুচী নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভিক্ষুক জাতি কখনও মাথা উচুঁ করে দাড়াতে পারেনা। ভিক্ষুক জাতীর কোন সম্মান থাকে না। আমরা কারও কাছে মাথা নোয়াব না। হাত পাতবো না। কারণ বাঙ্গালী বীরের জাতি।

অভিভাবকদের বোঝা কমাতে সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই বিতরণ করে আসছে। এখন বন্যায় যাদের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে, তাদেরকে আবারো বিনামুল্যে বই দেয়া হবে। এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছেলে-মেয়েরা যেন বিপদগামী না হয়, জঙ্গি, মাদক সেবি না হয় সে ব্যাপারে সব সময় শর্তক ও সচেতন থাকবার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *