আসুন ১৩ সেপ্টেম্বর বৃক্ষ রোপন অভিযান সফল করি

আসুন ১৩ সেপ্টেম্বর বৃক্ষ রোপন অভিযান সফল করি

লুৎফর রহমান আশু, প্রধান শিক্ষক,

গাছ আমাদের কী কী উপকার করে তার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা দেখি, গাছ আমাদের ফল-ফসল দেয়, ফুল দেয়, ছায়া দেয়, কাঠ দেয়। আর বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানতে পেরেছি গাছ আমাদের আরো অনেক উপকার করে। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি আর আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়, তা শুষে নেয় এভাবে গাছ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, পরিবেশে ভারসাম্য আনে। একটি গাছ বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

আর যেখানে গাছ বেশি থাকে সেখানে বৃষ্টিও বেশি হয় এ কথা তো সবারই জানা। মোটকথা পৃথিবী বাসোপযোগী থাকা ও মানুষের জীবন ধারণের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে গাছ বা বৃক্ষ। ফলে ইসলাম বৃক্ষরোপণের প্রতি উৎসাহিত করেছে, একে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য করেছে। হাদীসে এসেছে-মুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তো এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। পাখি খেলে সদাকা হবে। (এমন কি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৫২|

বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন ফযীলতের ঘোষণার সাথে সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বোচ্চ গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। এক হাদীসে তিনি ইরশাদ করেন যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ মুহূর্তেও তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন তা রোপণ করে দেয়। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৯০২; আলআদাবুল মুফরাদ, বুখারী, হাদীস ৪৭৯

হযরত আবু হুরাইরা রা. একদিন গাছ লাগাচ্ছিলেন। এমন সময় নবীজী পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরাইরা! কী লাগাচ্ছো? তিনি বললেন, একটি চারা রোপণ করছি। নবীজী বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম রোপণের কথা বলে দেব? আবু হুরায়রা বললেন, আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর প্রতিটির বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে গাছ লাগানো হবে। ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৮০৭, ইসলামে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোকে সবিশেষ সওয়ারের কাজ হিসেবে সদকায়ে জারিয়া বা প্রবহমান দানরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষরোপণ ও তাতে পরিচর্যা করেন, তাহলে ওই গাছটি যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু যত দিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় পুণ্যের সওয়াব লেখা হতে থাকবে। সদকায়ে জারিয়ার জন্য ছায়াদানকারী ফলবান বৃক্ষই তুলনামূলক বেশি উপকারী।

তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন—‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করে অথবা কোনো শস্য উত্পাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উত্পাদনকারীর জন্য সদকাহ (দান) স্বরূপ গণ্য হবে। ’ (বুখারি, হা. নম্বর-২৩২০, মুসলিম, হা. নম্বর-১৫৬৩/১২)।

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর ১৭ খ্রিঃ তারিখে রাজারহাট উপজেলার সুযোগ্য র্নিবাহী অফিসার জনাব মোঃ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গোটা উপজেলায় বৃক্ষ রোপন অভিযান পরিচালিত হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে এ ফজিলতপূর্ণ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। বৃক্ষ রোপন অভিযান সফল করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *