ভেঙে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, সেবা দেয়া হয় গাছতলায়

ভেঙে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, সেবা দেয়া হয় গাছতলায়

রফিকুল ইসলাম,
রাজারহাটে কালুয়ারচরে অবস্থিত একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার প্রায় ৬ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। অপরদিকে ক্লিনিকের পরিবর্তে এখন গাছতলায় সেবা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্যসেবাদানকারীরা।

কালুয়ারচর এলাকার বাসিন্দা কয়সার আলী, মনতাজ, আইয়ুব আলী, মেহের জামাল, শমসের আলীসহ অনেকে বলেন, উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের ধরলা নদীর অদূরে কালুয়ারচর এলাকায় চরাঞ্চলের ৬ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়। কালুয়ারচর থেকে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের দুরত্ব আরো বেশি হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কোথাও চিকিৎসা নেয়ার পথ খুঁজে পায় না।
ফলে অনেক রোগীকেই অকালেই না ফেরার দেশে চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানির প্রবল স্রোতে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ শত শত ঘরবাড়ী বিলীন হয়ে যায়। দুর্যোগপূর্ণ ওই এলাকায় চরম ঝুঁকিতে পড়ে বানভাসি মানুষজন। বন্যা পরবর্তীতে ওই সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দেয়ায় বাধ্য হয়েই পানি পান করে এবং পচা-দুর্গন্ধে মানুষজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে থাকে।
এ সময় সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হলেও স্টক করার মতো কোনো নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। ছিল না কালুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি। এ কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ওই এলাকার দিশারী নামের একটি ক্লাবে ওষুধপত্র রেখে এলাকার মানুষের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এখন গাছতলায় বসে। কিন্তু মূল্যবান ওষুধ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওই ক্লাবে ঝুঁকিতে রাখা হয়। বিপাকে পড়ে যায় স্বাস্থ্য সেবাদানকারীরা। তারপরও অতিকষ্টে স্বাস্থ্য সেবাদানকারীরা চরম দুর্ভোগের মাঝেও সেবা দিয়ে আসছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভেঙে পড়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই সেবাদানকারীদের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওষুধপত্র সরবরাহ করতে হয়। চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বেওয়া (৬৮) বলেন, ‘বাঁশের চরাট দিয়ে পার হয়া আসনু, সারাগাঁও কাঁপে। মনে হয় হানিত পড়ি গ্যানু। মোর ৩দিন ধরি জ্বর। ডাক্তারের বেটা ওষদ দিছে। ওই এলাকার ছাবিলা বেওয়া (৫৫) বলেন, ক্লিনিকের ডাক্তাররা খুব ভালো, বাড়িত আসি ওষদ দ্যায়া যায়। এ ব্যাপারে সেবাদানকারীরা জানান, বন্যায় রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাওয়ায় বানভাসী মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ বাড়ে। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়েই চিকিৎসা এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। এতে ওষুধ বহন করতে ভীষণ দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
এরপর অনেকে ওষুধ পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। এছাড়া বন্যার ২ মাস অতিবাহিত হলেও এই কমিউনিটি ক্লিনিকটি অন্যত্র স্থানান্তর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই এলাকার ৬ হাজার মানুষ সরকারি ক্লিনিকে সেবা নিতে পারছে না। তাদেরকে সেবা নিতে গেলে ১০/১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছিনাই হাট কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতে হয়।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ওই ক্লিনিকের প্রোফাইডার না থাকায় স্বাস্থ্য সহকারী নূর আলম দায়িত্বে রয়েছেন। ওই এলাকায় স্বাস্থ্য পরিদর্শক জান্নাতুন নাহার ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক নূরনবী সরকার স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছেন। গত সোমবার স্বাস্থ্য সহকারী নূর আলম জানান, আগের তুলনায় মানুষ এখন কম সেবা নিতে আসছে। ক্লাবে দামি ওষুধপত্র রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল্লাহ্‌ জানান, কালুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভেঙে যাওয়ায় পাশের একটি ক্লাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া ক্লিনিকটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যত্রে স্থানান্তরের জন্য সকল ব্যবস্থা নিতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সবমিলিয়ে ওই চরাঞ্চলের ৬ হাজার স্বল্প আয়ের মানুষের চিকিৎসা সেবার নামে বর্তমানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *