নিভৃতচারী লেখক হায়দার বসুনিয়া

নিভৃতচারী লেখক  হায়দার বসুনিয়া

আতিক মেসবাহ:
হায়দার বসুনিয়া।খুব অপরিচিত একটি নাম।পরিচিত হওয়ার কথাও না।ছাই খুজে মুক্ত বের করার মতো কীর্তি বা দুঃসাহসই বলুন ক’জন বাঙ্গালি দেখিয়েছে?
আজ এক অন্তর্হিত মানুষের কথা বলছি,যে কিনা কবিগুরু হবার স্বপ্ন দেখে নি,স্বপ্ন দেখেনি নিজের নামকে তুঙ্গে তুলে সবার কাছে নিজের নামটিকে খ্যাতির আদৌলতে ছেয়ে রাখতে।নিভৃতে বসে সারাটা জীবন চেষ্টা করেছেন সাহিত্যের সাথে হৃদয়ের অন্তিক সম্পর্ক সৃষ্টির।

নাগরিক পরিবেশে থেকেই যে সাহিত্য রচনা ও তার প্রকাশ ঘটবে এ বিষয়ে আমরা অনেকেই ষোলোআনা বিশ্বাস করি।কিন্তু তাতে কি?এই মানুষটা যে,স্রোতহীন নদীতে ভাসমান নৌকার মতোই স্থবির থেকেই রচনা করে আসছেন একের পর এক উপন্যাস, নাটক,কবিতা কিংবা ছোট গল্প।
স্রোতের বিপরীতে এতোটা অবিচলিত নাবিক খুব কমই পাওয়া যাবে যেমনটা এই হায়দার বসুনিয়া।

জন্ম কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের মনার কুটি নামের একটি নিভৃতগ্রামে।নিজের তীব্র মনোবল ও ইচ্ছাশক্তিকেকে পুঁজি করে সকল প্রতিবন্ধকতাকে ছাপিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও শহুরে জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হন নি এই মানুষটি।

লেখাপড়া শেষে পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নেন।একদিকে পরিবার অপরদিকে পেশা।
বাকিটা সময় উজাড় করে দিয়েছেন সাহিত্যাঙ্গনে।রচনা করেছেন পঞ্চাশটির বেশি উপন্যাস।
এছাড়াও ৮ টি নাটক ও ৭ টি কাব্যগ্রন্থও আছে তার লেখা।
নিজের অবসরের ক্লান্তি ও শ্রান্তিকে মাধুরী বানিয়ে সুন্দর ও রুচিসম্মত করে তৈরি করেছেন এক একটি লেখাকে।

চলো যাই তেপান্তরের মাঠে,তূলো মুনি,তিস্তা নদীর পাড়ে,ভাগ্যান্বেশী ভবঘুরে,মেথর সমাচার,মরা তিস্তার দোদ্যকচিহ্নের মতো হৃদয়কাপানো উপন্যাস রচনা করেছেন নিভৃতচারী লেখক বলে খ্যাত এই মানুষটি।
প্রতিটি লেখায় মাটি ও জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি করেছেন এই কীর্তিমান।
চোখের পলকে পেড়িয়ে এসেছেন জীবনের উনআশিটি বছর।সময়ের পরিবর্তনে, যুগের বিবর্তনে চেহারায় ফুটেছে বয়সের ছাপ।কিন্তু আজও অনবদ্য লিখে যাচ্ছেন এই মানুষটি।

প্রতি বছর বইমেলা এলেই মুখিয়ে থাকেন,নিজেই বইয়ের প্রকাশের জন্য।নিভৃত অজপাড়াগাঁয়ে বসেও যে,রচনা করা যায়,অনিন্দ্যসুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী সব শিল্পকর্ম,তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই হায়দার বসুনিয়া।

আমরা কুড়িগ্রামের মানুষ গর্ব করি সব্যসাচী লেখককে নিয়ে,গর্ব করি ভাওয়াইয়া নিয়ে,কিন্তু একবারো কি এরকম মানুষকে নিয়ে ভেবেছি?
যেদিন আমরা গর্ব করে সারাদেশবাসীকে দেখাতে ও সেইসাথে খুজে বের করতে পারব হায়দার বসুনিয়ার মতো নিভৃতচারী রত্নদের সেদিন আমাদের উপরে আরোপিত তাচ্ছিল্যের সুরের রেশ হয়তোবা অনেকখানি কমে যাবে।