চাঁন্দামারীর ঐতিহ্য পদ্ম

চাঁন্দামারীর ঐতিহ্য পদ্ম

মোছাঃ নুসরাত জাহানঃ

চাঁন্দামারী, নামটা শুনলেই কেমন একটা মাছ মাছ আমেজ পাওয়া যায়। কোন অপরিচিত ব্যক্তিকে যখন বলা হয় যে গ্রামের নাম চাঁন্দামারী, নামটা শুনেই ঐ ব্যক্তি বলে যায়গাটায় অনেক বেশী ছোট মাছ পাওয়া যায় নাকি? উত্তরটা হয় হ্যাঁ। মোঘল আমলে নির্মিত চাঁন্দামারী মসজিদ, পদ্মফুল আর দেশি মাছ এ সবই চাঁন্দামারী নামক এই ছোট্ট গ্রামের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

উত্তর বঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অবস্থিত এ গ্রামে রয়েছে ছোট্ট একটি বিল। স্থানীয়দের কাছে চ্যাংমারীর দোলা নামে খ্যাত এবং আনুমানিক চার বর্গকিলোমিটার জুরে বিস্তৃত এ বিল। আউষ মৌসুমে চাষিরা চাষ করলেও বর্ষাকালে পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে এই ভূমি। যা শরৎকালে পদ্মফুলে ভরে ওঠে। যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন পদ্মফুল এই বিল এবং গ্রামটিকে অনন্যতা দান করেছে। অনেকেই দুর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পদ্মফুলে ছেয়ে যাওয়া এই বিলটির সৌন্দর্য অবলোকন করতে। এটাই সম্ভবত কুড়িগ্রাম জেলার সবথেকে বড় প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন পদ্ম সরোবর। প্রতি বছর শরৎ কালে লক্ষ লক্ষ পদ্মফুল ফোটে এই বিলে। ধান গাছের মত সারি সারি পদ্ম আর পদ্ম পাতা ভেসে থাকার কারনে কোথাও কোথাও বিলের জল-ই দেখতে পাওয়া যায় না।

১০৮ টি পদ্ম ব্যতীত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব “শারদীয় দূর্গা উৎসব” অসম্ভব। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম উভয় জেলার অধীকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ফুলের চাহিদা এ বিলের পদ্ম দিয়েই মেটে। দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু সংখ্যক যুবক মৌসুমী পদ্ম ব্যবসা করেও ব্যাপক লাভবান হয়।

চাঁন্দামারীর এ বিলে (চ্যাংমারীর দোলায়) যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক ভাবে নানান প্রজাতির দেশি মাছও উৎপন্ন হয়ে আসছে। স্থানীয় কিছু অসাধু মৎসব্যবসায়ী সহ নানাবিধ কারনে এর মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। অতীতে শীতকালে বিলটির পানি শুকিয়ে গেলে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও ইদানিং তা অনেকটাই কমে গেছে।

বছরে এক মৌসুমে আউষের চাষ আর অন্য মৌসুমে পদ্মফুল আর মাছ। যা এই গ্রামের মানুষের প্রত্যাহিক জীবনের সাথে নিভৃত ভাবে মিশে গেছে।