রাজারহাটে মাস্ক তেরী করে এলাকাবাসীর পাশে দাড়িয়েছেন বাবা ও মেয়ে

রাজারহাটে মাস্ক তেরী করে এলাকাবাসীর পাশে দাড়িয়েছেন বাবা ও মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে মাস্ক তৈরি করে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা ও মেয়ে।নিজেদের ঝুঁকি রয়েছে জানা সত্ত্বেও বাবা-মেয়ে এলাকাবাসীর করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করছেন। পাশাপাশি নিজেরাই সুতি কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করে অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে তা বণ্টন করেন।
এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এ কাজে খুশি এলাকাবাসী।
বাবা মো: নুর ইসলাম রতিগ্রাম বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও মেয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্সে ৩য় বর্ষের শিক্ষাথী মোছা: নুসরাত জাহান। রাজারহাট ইউনিয়নে চাঁন্দামারীতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তারা মাস্ক তৈরি করছেন।
নুসরাত জাহান বলেন, আম্মুর সেলাই মেশিন টা দেখেই মাথায় একটা আইডিয়া চলে এসেছিল, আব্বু-আম্মুর সাথে আইডিয়াটা শেয়ার করতেই আম্মু আলমারি, বাক্স সব খুঁজে খুঁজে মাস্ক তৈরির উপযোগী পপলিন কাপড় বের করেন আর আব্বু সাথে সাথেই মেশিনটা নিয়ে বসে পড়েন। পরিবারের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তৈরি হয় প্রায় ৪০টি মাস্ক।
আর সেগুলো নিয়ে আমাদের বাড়ীর পাশের চাঁন্দামারী বাজারের প্রতিটি দোকানে গিয়ে ১টি করে মাস্ক বিতরন, সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সর্বোপরি করনার বিস্তার ঠেকাতে তাদের করনীয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা প্রদান।(যথেষ্ট দুরত্ব এবং নিজেদের সেফটি বজায় রেখেই কাজটা করার চেষ্টা করেছি)
গোটা বিশ্ব এখন করনা আতঙ্কে আতঙ্কিত, থমকে যাচ্ছে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর গুলো। গ্রামেও পৌছে যাচ্ছে বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিরা, কিন্তু এই গ্রাম পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন কতটুকু সচেতন! করনা আতঙ্ক এবং তাদের করনীয় সম্পর্কে তাদের কি যথাযথ কোন সঠিক ধারনা আছে! আদৌও কি তারা কোন সতর্কতা অবলম্বন করছে! একটা নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে এটা জানলেও এ বিষয়ে তাদের আলোচনা চায়ের দোকানে কিংবা টংয়ের আড্ডায় সীমাবদ্ধ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, একজন ব্যক্তি থেকে আরেকজন ব্যক্তির দুরত্ব বজায় রাখা এসব সম্পর্কে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনের ধারনা নেই বললেই চলে। রাজারহাট বাজারেই হাতে গোনা কিছু মানুষের কাছে মাস্ক দেখেছি, বাকিরা চলাফেরা করছে অবাধে। অথচ এটা একটা উপজেলা শহর। চিন্তা করুন, কতটা হুমকির সম্মুখীন আমরা!
অনেকেই আবার বলে এত কিছু করে কি হবে। আল্লাহ্ যেদিন মৃত্যু লিখেছে সেদিন তো হবেই। যদিও এনাদের বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তবুও বলি আপনাদের কথাও ঠিক তবে আল্লাহ্ কিন্তু বাচার জন্য চেষ্টা করতেও বলেছেন। তিনি যেমন রোগ, মহামারী, দুর্যোগ দিবেন এগুলো থেকে রেহাই পেতে তার বান্দাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
একা সচেতনতা অবলম্বন করলে করনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা অবলম্বন করুন, মনে রাখবেন সেফ্টি ফাস্ট। নিজের সেফটি বজায় রেখে পরিবার, আশপাশের ব্যক্তিবর্গ সহ পুরো গ্রামের মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করুন। আপনার এলাকার বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করুন, প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিন কিংবা প্রশাসনকে অবহিত করুন। সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের এ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে।
আমি আমার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার চেস্টা করেছি, আপনি করছেন তো??
এই এগিয়ে আসার মানে এই নয় যে কয়েকজনকে একত্রিত করে বুঝিয়ে বলবেন কিংবা দল বেধে প্রচারণা চালাবেন। এখন প্রতি নিয়ত অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। নিজের সেফ্টি বজায় রেখে কিছু করতে পারলে করেন নাহলে ঘড়ে বসে থেকে এর বিস্তার রোধ করতে সহোযোগিতা করুন এবং পরিবারের সকল সদস্যদের বাড়ীতে থাকা নিশ্চিত করুন। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যদের বাড়ির বাইরে বেড়াতে নিরুৎসাহিত করুন।
কিছুদিন গৃহবন্দী থেকেই নাহয় এবার দেশপ্রেমের পরিচয় টুকু দিন।