হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার আহবান

হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার আহবান

নিউজ ডেস্ক:

‘বৈচিত্র্যময় সমাজ: অফুরন্ত সম্ভাবনা’ বই এর ডিজিটাল মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার আহবান।

জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বহুলাংশে পিছিয়ে রয়েছেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ প্রতিটি মৌলিক অধিকার থেকে তারা অনেকাংশেই বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সমাজের সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে অগ্রসর হতে হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৭ শতাংশের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ-সবিধার অভাবে ৩৭% ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। অপর দিকে হিজড়া ব্যক্তিদের মাঝে ৬৮ শতাংশের কর্ম দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা থাকলেও ৬২% কোন ধরনের সুবিধাই পান না। ফলে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত ৮৩%। ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি বা কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং তাদের জীবন মান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

উক্ত গবেষণার আলোকে আজ ১৮ জুলাই, ২০২০ শনিবার, সকাল ১১.০০ টা “বৈচিত্র্যময় সমাজ: অফুরন্ত সম্ভাবনা” বই এর ডিজিটাল মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষনাটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাইমা আকতার তিনি বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আস্থা রেখে তাদের নিয়োগে আগ্রহী নয়। আবার নিয়োগ পেলেও প্রবেশগম্যতার অভাব, সহকর্মীদের বিরূপ এবং প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে তারা ঝরে পরেন।

হিজড়া ব্যক্তিদের অবস্থা আরো শোচনীয়। তারা পরিবার থেকে বিতাড়িত এবং সমাজে অনাকাঙ্খিত। অধিকাংশই সম্মানজনক পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে না পেরে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হলে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্বাবলম্বী হয়ে সম্মানজনক জীবন যাপনে সক্ষম হবে। একই সাথে সামাজিক ন্যায়বিচারও নিশ্চিত হবে।

নগর গবেষনা কেন্দ্র এর সাধারন সম্পাদক, সালমা এ শাফি বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও শহরে আমরা এখন পর্যন্ত একটি প্রবশেগোম্য সম্পন্ন কোন সড়ক বা ফুটপাত তৈরি করতে পারিনি। নগরে যতগুলো অবকাঠামো নির্মান হচ্ছে সেগুলো কখনোই আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণ হচ্ছে না যার ফলে এগুলো নির্মাণের পরে একশ্রেণীর মানুষ যারা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা শিকার তারা আসলে এ সকল স্থাপনা এবং অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারছেন না।

গবেষণায় সফল প্রতিবন্ধী ও হিজড়া ব্যক্তিদের কথা উঠে এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় শুধু মাত্র সুযোগ সুবিধা নিশ্চত করা গেলে এদেরকে সমাজের মূল শ্রোত ধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। এ টু আই ও ফোকাল পার্সন ডেইজি এবং এক্সেসেবেলিটি কনসালটেন্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য্য বলেন, আমি নিজে জাপানে একটি দক্ষতা উন্নয়নমূলক ট্রেনিং অংশগ্রহণ করেছিলাম।

কিন্তু দেশে এসে আমার দক্ষতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কোথায়ও কাজ পায়নি। অবশেষে বেসরকারি একটি সংস্থা আমাকে কাজ করার সুযোগ দেয়। আমি এখন সরকারের এ টু আই প্রজেক্টে কর্মরত আছি। কাজেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং চাকুরী নিশ্চিত করা হলে প্রতিবন্ধী ও হিজড়া ব্যক্তিগণ যদি তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করা সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে এসকল মানুষগুলো সমাজের বোঝা হিসেবে গণ্য হবে। দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশের পরিচালক, দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হলে তারা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। ফলে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে। সাদা কালে হিজরা সংঘ সংগঠনের সভানেত্রী অনন্যা বণিক বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠী পরিবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার ফলে তারা শিক্ষা ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের আচরনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিভিন্ন দক্ষতা থাকা সত্বেও হিজড়া ব্যক্তিদের সুযোগ দেয়া হয় না। যেমন অনেক হিজড়া ব্যক্তির নৃত্যে দক্ষতা থাকলেও কোন সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান না। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কোন না কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, প্রবেশগম্যতা এবং বৈষম্যহীনতা- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হলেই তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই যদি হিজড়া ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগে এগিয়ে আসে এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন সম্ভব।