১০ টাকা কেজির চাল নিম্নমান ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় খাচ্ছে গবাদিপশু

১০ টাকা কেজির চাল নিম্নমান ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় খাচ্ছে গবাদিপশু

।।নিউজ ডেস্ক।।

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ৭ সেপ্টেম্বর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বা স্বল্পমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে নিম্ন আয়ের মানুষজনের একটু পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখলেও সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে খোদ জেলা খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারির সহযোগিতায় প্রতিবছর আমন-বোরো মৌসুমে নিম্নমানের চাল ডিলারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে গোডাউনজাত করা হয়। আর এসব নিম্নমানের চাল দরিদ্র মানুষের নিকট বিতরণ করার অভিযোগ উঠেছে জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। নষ্ট, লাল এবং দুর্গন্ধযুক্ত এসব চাল নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে সুবিধাভোগীদের।

নিজেরা খেতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে আবার গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবত্তর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর আইয়ুব আলী। তিনি ২০১৬ সালেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় স্বল্পমূল্যের খাদ্যশস্য কার্ড পেয়েছেন। নিয়মিতভাবেই স্বল্পমূল্যের চাল উত্তোলন করে আসছেন তিনি।

কিন্তু এবার তিনি স্বল্পমুল্যেও চাল পেয়েও খুশি নন। কেননা সরিষাবাড়ি গ্রামে নুর ইসলামের নিকট থেকে তিনি ১০ টাকা দরে ৩শ’ টাকায় ৩০ কেজি চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। নষ্ট, লাল এবং দুর্গন্ধযুক্ত এসব খাবার অনুপযোগি চাল এখন বিষ ফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেরা খেতে না পেরে তার বাড়িতে গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল এবং হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন।

আইয়ুব আলী জানান, সম্ভবত এসব চাল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গোডাউনে অযত্নে থাকায় খাবার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এসব পচা দুর্গন্ধযুক্ত লাল চাল খাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করছি। ডিলারের কাছে ফেরত নিয়ে গেলে তারা উল্টো তাড়িয়ে দেন।একই এলাকার দিনমজুর কার্ডধারী ইনতার আলী, আজগর আলীও অভিযোগ করে বলেন, ১০ কেজির রেশন কার্ড পেয়েছি। কিন্তু এবার দু’বারই এই চাল পেয়েছি। সেই চাল খেতে না পেরে ১ম বার ২৫ টাকা এবং ২য় বারের চাল ৩৫ টাকা দরে কেজিতে বাইরে বিক্রি করে ভালো চাল কিনে খাচ্ছি।

কিছু চাল মানুষের কাছেও বিক্রি করেছি। তারা এগুলো চাল নিয়ে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের জুম্মারহাট গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, হাজেরা বেগম, জোবেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ১০ টাকা কেজির চালের রেশন কার্ড পেয়ে আমরা খুশি হয়েছিলাম। সরকার ভালোই করেছে আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের উপকার করছে। কিন্তু উপজেলা খাদ্যগুদাম ডিলারের মাধ্যমে যে পচা মোটা লাল চাল দিয়েছে সেগুলো খাওয়া যায় না। ত্রিশ কেজির বস্তার পরিবর্তে আমাদেরকে নিজেদের বস্তা নিয়ে গিয়ে চাল ঢেলে নিয়ে আসতে হচ্ছে। বস্তা না নিয়ে গেলে আরো বিশ টাকা ডিলারকে দিতে হচ্ছে। এমন অভিযোগ সুবিধাভোগীদের।

তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের জনপ্রতি তিনশ’ টাকায় ৩০ কেজি চালের বস্তা দেয়ার কথা থাকলেও অনেক ডিলার ৫০ কেজি চালের বস্তা খুলে সুবিধাভোগীদের আনা বস্তায় করে চাল দিচ্ছে। রান্নার অনুপযোগী এসব চাল পেয়ে সুবিধাভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিতরণকারি ডিলার তাহের বলেন, উলিপুর খাদ্যগুদাম থেকে আমাকে দু’ধরনের চালের বস্তা দেয়া হয়েছে। তারা বলেছে ভালোটার সাথে খারাপ চাল চালিয়ে দিতে। এখন আমার তো এখানে দোষ নেই। আমি বাধ্য হয়েই এই চাল বিতরণ করছি। একই ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া বাজারের ডিলার আব্দুর রউফ রিজু বস্তার জন্য বাড়তি ২০ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাকে নষ্ট চাল দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমি ঝগড়া করে মোটামুটি ভালোমানের চাল নিয়ে এসে বিতরণ করছি।

রাজারহাট উপজেলার চায়না বাজারের ডিলারের সহযোগী মিজানুর রহমান রকেট বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে সব ডিলারের কাছে এমন পচা ও লাল চাল দেয়া হয়েছে। কার্ডধারীরা ফেরত দিতে আসছে। কিন্তু আমরা নিরুপায়। চাল পরিবর্তন করে দিচ্ছে খাদ্যগুদাম থেকে।

গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের এসব চাল ডিলারদের দিয়েছে। এসব খাবার অনুপযোগী চাল পেয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূূরে তাসনিম নিম্নমানের চাল বিতরণের ঘটনার সত্য স্বীকার করেন।

মাঠ পর্যায়ে নিম্নমানের চাল বিতরণ দেখে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানিয়ে ভাল চালের ব্যবস্থা করেন। এই বিষয়ে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৬৫ জন কার্ডধারিকে ২৬৮ জন ডিলারের মাধ্যমে এই চাল দেয়া হয়। ২০১৬ সাল থেকে বছরে ৫ মাস এই চাল দেয়া হলেও চলতি বছর হতে মার্চ, এপ্রিল, মে, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর এই ৭ মাস পর্যন্ত স্বল্পমূল্যের এই চাল বিতরণ করা হবে।

তথ্যসূত্রঃজেনিউজ বিডি।