ফুলবাড়ীতে ৩ মাস না যেতেই ভেঙ্গে গেল ব্রিজ!

ফুলবাড়ীতে ৩ মাস না যেতেই ভেঙ্গে গেল ব্রিজ!

এজি লাভলু:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম গ্রামের বাঘখাওয়ার চরে তিন মাস আগে নির্মাণ কাজ শেষ করা সেতুটি ভেঙ্গে পড়েছে। অনিয়ম আর নিম্নমানের কাজ করায় এ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল ভেঙ্গে ব্রিজটি হেলে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পূর্ব ধনীরাম আবাসনগামী রাস্তায় মরাধরলার (নালা) ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ব্রিজটি নির্মাণ করে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৩০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬শ ৫৬ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কুড়িগ্রামের পুরাতন স্টেশন এলাকার এটিএম দেলদার হোসেন টিটু নামের এক ঠিকাদার সেতুটি নির্মাণ করেন।

বাঘখাওয়ার চর এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করে। রড, সিমেন্ট, পাথর স্টিমেটের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে ব্যবহার করেছে।

এলাকাবাসী সেলিম, আব্দুর রহমান, আব্দুর রশিদ, শহর আলী, সেফাত আলী, দেলবর, জয়নাল, শাহালম, এনামুল, মমিনুলসহ অনেকে জানান, ঢালাইয়ের সময় পাথর পরিষ্কার না করে কাঁদামাটিসহ ঢালাই করেছে। বালু ও পাথরের তুলনায় সিমেন্ট কম দিয়েছে। নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদে সে সময় এলাকাবাসী নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত এসে কাজ বন্ধ না করার জন্য তাদেরকে হুমকি ধামকী দেন। এসময় স্থানীয়দের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতন্ডা হয়। সেদিনের মতো কাজ বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে আবারও নিম্নমানের সামগ্রীতে ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। ব্রিজের এ্যাপার্টমেন্ট ওয়াল, বীম ও ছাদসহ সব ধরনের ঢালাইয়ের সময় ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার না করে শুধুমাত্র বাঁশ দিয়ে কাজ শেষ করে ঠিকাদারসহ তাদের লোকজন।

স্থানীয়রা আরো জানান, কয়েকদিন আগে ভার্টিক্যাল ওয়ালে ফাটল ধরেছে। কোরবানীর ঈদের আগের দিন এটি ভেঙ্গে পড়ে। যে কোন সময় সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়বে ব্রিজটি। এতে প্রাণহানিসহ ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। পূর্ব ধনীরাম আবাসনের ৯০টি পবিারসহ বাঘখাওয়ার চরের প্রায় ৫শ পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় এখানকার মানুষগুলো পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। দুর্ভোগ কমাতে সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় স্থানীয়রা বাশ দিয়ে কোন রকম চলাচল উপযোগি করে তুলেছে। জনবসতি এলাকায় সেতু নির্মাানের মাধ্যমে সরকারী অর্থের অপচয় কার স্বার্থে করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ জানান, সেতুটি নির্মাণ প্রাক্কলন অনুযায়ী হয় নাই। ফলে ধ্বসে পড়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, সম্প্রতি বন্যায় সেতুটির নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আরেফিন জানান, ব্রিজটি বন্যা নাকি নিম্নমানের কাজের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে সেই বিষয়টি নিশ্চিত হবার জন্য একটি ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করপা হয়েছে। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।