কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের গল্প নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বীরগাথা শীর্ষক ডকুমেন্টরী

কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনের গল্প নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বীরগাথা শীর্ষক ডকুমেন্টরী

হুমায়ুন কবির সূর্য্য:
কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী স্মৃতিচারণমূলক ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ শীর্ষক ডকুমেন্টরী ও আলোচনাসভা শেষ হয়েছে। তিন দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বিভিন্ন স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেদের রণাঙ্গণের প্রত্যক্ষ ঘটনাগুলোর বর্ণনা তুলে ধরলেন মহান বীর সেনানীরা। বুধবার জেলা প্রশাসন স্বপ্নকুঁড়ি রিসোর্স সেন্টারে স্মৃতিচারণে অংশ নেন উলিপুর, চিলমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জিলুফা সুলতানা, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, সাবেক সিভিল সার্জন ডা: আমিনুল ইসলামসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।


তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে ৪৫জন মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের যুদ্ধের ইতিকথা সকলের সামনে তুলে ধরেন। এসময় সহকর্মীদের মৃত্যুর স্মৃতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। বিদ্যালয়ের শিশুরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে এই প্রথম সরাসরি এক সাথে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে কাছ থেকে দেখে অবিভূত হয়ে ওঠেন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে রণাঙ্গনের বর্ণণা শুনে শিহরিত হয়ে ওঠে। প্রতিটি বর্ণনা শ্রোতাদের মনপ্রাণকে যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, চোখের সামনেই বোধহয় ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে। এমন টানটান উত্তেজনা, মর্মস্পর্শী ও হ্নদয় বিদারক স্মৃতিচারণ একদিন ইতিহাস হয়ে রবে প্রযুক্তির মাধ্যমে; সেই মানসে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মোছা: সুলতানা পারভীন এই উদ্যোগ গ্রহন করেন। এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ানকৃত এ ইতিহাস সমৃদ্ধ স্মৃতিচারণ অডিও-ভিডিও’র মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে জীবিত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’’ কর্মসূচি’র মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা ধরে রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আগামি তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব কণ্ঠে জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।


এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর ইউনিট কমান্ডের সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল বাতেন সরকার জানান, সময়ের স্রোতে ঝরে পরছে দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো। জেলা প্রশাসন প্রত্যন্ত এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সেলুলয়েডের মাধ্যমে তাদের বণর্নাগুলো তুলে ধরছেন ডকুমেন্টেরীতে। এতে মুক্তিযোদ্ধারাও খুশি। খুশি ছোট ছোট প্রজন্মরাও। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। কুড়িগ্রাম জেলার সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের এই কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় এটি উদ্যোগ নেয়া দরকার। নাহলে পরে আফসোস করতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, মুক্তিযোদ্ধারা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। এদের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেলায় জীবিত ২হাজার ৭৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার বীরগাথা স্মৃতিচারণ ডকুমেন্টরীর মাধ্যমে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠ থেকে যুদ্ধের বর্ণনা সংরক্ষণ করা হবে। আর এ বর্ণনার সাক্ষি হয়ে রইবেন বিভিন্ন স্কুলের ছোটছোট শিক্ষার্থীরা। আমরা জেলা দিয়ে এটি শুরু করেছি। এরপর ইউনিয়নে ইউনিয়নে এ কর্মসূচি পালন করে স্মৃতিচারণ সংরক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় করিয়ে দিব।