প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতায়- গোড়াই রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে

প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতায়- গোড়াই রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত,
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলাধীন গোড়াই রঘুরায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক সোনারের অনিয়ম দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষা ব্যবস্থা ভেস্তে যেতে বসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ১২/০৫/২০১৪ইং তারিখে যোগদান করার পর থেকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটি নিজের মনগড়াভাবে চালিয়ে আসছে। এমনকি গত ১৬ ডিসেম্বরসহ জাতীয় দিবস, মা এবং অভিভাবক সমাবেশ, ছাত্র-ছাত্রী উদ্বুদ্ধকরণে কোন সভা-সমাবেশ হয়নি বলে অভিযোগ করে এলাকাবাসীরা। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হকসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে সঠিকসময়ে আগমন ও প্রস্থান না করারও অভিযোগ উঠে। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সম্প্রতি স্লিপ প্রকল্পের ৪০হাজার টাকা বিপরীতে মাত্র একটি নাম ফলক ও নামে মাত্র একটি পতাকা স্তম্ভ স্থাপন করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করে এলাকাবাসীরা।
২১ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক বিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই। সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন, জীবুন্নাহার, আয়ভান ও মাহমুদা বেগম অফিসরুমে বসে খোশগল্প করছে।
পাশে আরডিআরএস নামের বেসরকারী সংস্থার কর্মী কামরুন নাহার তৃতীয় শ্রেণীর খাতা মূল্যায়ন করছে। পাশের শ্রেণী কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীরা হইহুললুর করছে। এসময় কথা হয় ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আঃ লতিফ মিয়ার সাথে।
তিনি জানান, বিদ্যালয়টিতে একজন শিক্ষক বাদে সকলে মহিলা। এবং প্রতিটি মহিলার নবজাতক শিশু রয়েছে। তারা তাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সাংবাদিকরা আসার খবর পেয়ে এলাকাবাসীরা ওই বিদ্যালয়ে এসে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম- দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরেন। এরমধ্যে আওয়ামীলীগের সদস্য এবং ওই বিদ্যালয়ের সহসভাপতি সামছুল হক গত ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস ওই বিদ্যালয়ে পালিত না হওয়ার স্বচিত্র ভিডিও উপস্থাপন করেন।
এব্যাপারে ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যারা বিজয় দিবসকে অস্বীকার করে পালন করে না, তারা স্বাধীনতা বিরোধী। তারা সরকারী চাকুরী করে কিভাবে? তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার শাস্তি হওয়া দরকার। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম স্লিপ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী আক্তারুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হকসহ সহকারী শিক্ষিকারা সঠিকসময়ে বিদ্যালয়ে আস। যাওযা করে না। এসব বিষয়ে বার বার স্কুল ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষককে সর্তক করার চেষ্টা করলে স্থানীয় শিক্ষকদের দাফটে তা আর বাস্তবায়িত হয় না। একপর্যায়ে সভাপতি সাংবাদিকদের অফিস কক্ষে নিয়ে গেলে ওই স্থানীয় প্রভাবশালী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগম অভিযোগকারীসহ বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে অভিযোগকারীদেরকে তালাবন্দি করার চেষ্টা করে।
এসময় সাংবাদিকরাও অফিসে সভাপতির সাথে ছিলেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম সহ এলাকাবাসীরা ছুটে এসে তালা খুলে দেন। তালা খুলে দেয়ার পর ১২টা ৩৫মিনিটে প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক অফিসে এসে বিষয়টির জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চান। দূর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নেয়ামুল হক আংশিক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি যা কিছু করেছি সব সরকারী বিধি অনুযায়ী করেছি।
এ থানায় ২৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ রকম অনিয়ম দূর্নীতি সব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। আমি ফেরাস্তা না ভূল আমারও হতে পারে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ক্লাস্টার ট্রেইনার মোঃ জাহিদুল ইসলাম ফারুক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মূল ঘটনা হলো ওই প্রতিষ্ঠানে পিয়ন নিয়োগকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *