ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে কুড়িগ্রামে দুশো চরে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে কুড়িগ্রামে দুশো চরে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপূত্রের পানি শুক্রবার দুপুরে বিপদসীমার ১১ ও ১২ সেমিন্টমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল এলাকায়। ইতিমধ্যে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের দু’শতাধিক চরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।

বিভিন্ন জায়গায় হুমকীতে রয়েছে বাঁধ ও সড়ক। পানি বাড়তে থাকায় বাড়ী ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে বানভাসীরা। সদরের যাত্রাপুরে ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে বন্যার পানি ঢুকে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।হুমকীর মূখে রয়েছে সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা ও রামহরি মৌজার দেড় শতাধিক পরিবার।

গত এক সপ্তাহে চতুরা মৌজায় ১২০টি বাড়ী নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কালিরহাট বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ আবাদি জমিন।

শুক্রবার সরজমিন রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়। বন্যার ফলে চতুরা ও রামহরি মৌজায় প্রায় ৫০টি বাড়ী প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও গত এক সপ্তাহে তীব্র ভাঙনে এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১২০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কালিরহাট বাজার এলাকায় স্থানীয় এমপি’র উদ্যোগে ৫ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

ইতোমধ্যে বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে কালিহাট বাজার, কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনার মুখা মাদ্রাসা, পাইকের পাড়া মাদ্রাসা, দুটি মসজিদসহ ৩টি মন্দির। নদী ভাঙনের শিকার চতুরার সতিশের পূত্র বিনন নদী থেকে ঘর সড়িয়েও পানিবন্দির কারণে গত তিনদিন ধরে খোলা আকাশে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। চতুরা এলাকার নরেন্দ্র চন্দ্রের ছেলের বউ লক্ষীরানী (২২) তার চার বছরের কন্যা শ্রাবনীকে কোলে নিয়ে উদাস চোখে চেয়ে আছেন তিস্তা নদীর দিকে। তিনি জানালেন, ‘দুইদিন ধরি পানিত ডুবি আছি। নদীও বগলোত ঠেকছে। এ্যালা কোটে যামো কি করমো কিছুই মাথাত ঢুকছে না।’ বন্যায় এই বাড়িতে আশ্রয় নেয়া রুপালী (২৮) জানান, ‘নদী হামার সউগ খায়া নিয়া গেইছে। এমরা হামাকগুলাক বাড়ীত ঠাঁই দিছে। হামার লেপটিনও নাই নলকুপও নাই।

গত দুই বছরে কাঁইয়ো হামাক সাহায্য করে নাই।’ ভীষন ভোগান্তির মধ্যে থাকা চতুরা গ্রামের লোকজন জানালেন, পূর্বে নরেন চন্দ্রের বাড়ী থেকে পশ্চিমে তোফাজ্জলের বাড়ী পর্যন্ত এককিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের ফলে নি:স্ব হয়েছে ১২০টি পরিবার এরমধ্যে চতুরা এলাকায় গত তিন দিনে নদীগর্ভে গেছে বিলিন হয়েছে ইয়াকুব আলী, মতিয়ার, সেরাজল, কেরামত, ফজলু, নুর আলম, বেলাল, দুলাল, জেলদার, ওসমান, আহাম্মদ, জহর আলী, সৈদার, নুর ইসলাম, আমিনুর, জাহাঙ্গীর, হামিদ,সমছেল, রোস্তমের বাড়ীসহ আরও ১৫/১৬টি বাড়ী।

অপরদিকে রামহরি এলাকার তোফাজ্জল (৪৮) জানান, ‘গত তিন দিনে আমার অপর তিন ভাই জেন্নাত আলী, রহমত আলী ও রহিমুদ্দিনর বাড়ি তিস্তা গিলে খেয়েছে। এছাড়াও এখানে আরও ১৫/২০টি বাড়ি ভেঙ্গে গেছে।’ ভাঙ্গন কবলিত ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত কয়েক বছরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের অর্ধেকটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনো দু’হাজার পরিবার মেইনল্যান্ডে বসবাস করছে। সরকার যদি দ্রুততম সময়ে নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করে তাহলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবেলায় আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে।

হুমায়ুন কবির সূর্য্য