চিলমারীতে দেড় লাখ বানভাসি মানুষ খোলা আকাশের নীচে

চিলমারীতে দেড় লাখ বানভাসি মানুষ খোলা আকাশের নীচে

।। নিউজ ডেস্ক ।।
চিলমারী উপজেলার প্রায় দেড় লাখ বানভাসি মানুষ খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শেষ সম্বল গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও গত চব্বিশ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্র নদের পানি তেত্রিশ সেন্টিমিটার কমে, বর্তমানে চিলমারী ব্রক্ষপদ নদ পয়েন্টে ৫৪ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি মেম্বার জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সামান্য ত্রাণ বিতরন করতে গিয়ে বানভাসিদের কাছে অপমানিত হচ্ছেন। এদিকে গোটা উপজেলার মানুষ পানিবন্দি থাকায় খাদ্যের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। বানভাসিদের অভিযোগ, এখনও সেভাবে এগিয়ে আসেনি ব্যক্তি বা কোন সাহায্য সংস্থা।

শনিবার রাতে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে, রমনা রেল ষ্টেশন থেকে সামান্য অদূরে বিজয় নগর গ্রাম এলাকা সংলগ্ন রেল লাইন। ভেঙে গেছে রমনা ইউনিয়নের ভরট গ্রাম ওয়াপদা বাঁধ। এদিকে রমনা রেল লাইন ভেঙে যাওয়ায়, বিজয় নগর, ছোট কুষ্টারী গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে রেল লাইনে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃদ্ধ ও শিশুরা সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর অবস্থায় রয়েছেন। প্রায় ৩ হাজার পরিবার ঠাসাঠাসি- গাদগাদি করে দিন কাটাচ্ছেন সেখানে।

রেল লাইনে অবস্থানকারী শহীদ আলী (৪৫) বলেন, সম্প্রতি কারা যেন হাফ মাইল পর পর তিন-চারটি নলকূপ পূঁতেছে। যার ফলে বিশুদ্ধ পানি সে এলাকার লোকজনরা পেলেও, প্রায় হাফ মাইল হেঁটে গিয়ে খুব কষ্ট করে তাদেরকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

এ দিকে হ্যালি প্যাড নামক উঁচু স্থানে অসংখ্য গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর সাথে কমপক্ষে পাঁচশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেয়া নয়াবাড়ী এলাকার দেলোয়ার হোসেন (৬০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িতে একতল পানি, ক্ষুধায় পেট জ্বলছে, তবু লজ্জায় কারও কাছে কিছু চাইতে পারছি না।

বহরের ভিটার ফয়েজ উদ্দিন (৭০) বলেন, ৮৮ সালের বন্যায় তার বাড়ির খাট পানিতে তলায়নি, আর এবারের বন্যায় বাড়ি থেকে স্বপরিবারে হ্যালি প্যাডে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ এখনও তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য করেনি। একই কথা বলেছেন, একই স্থানে আশ্রয় নেওয়া বহরের ভিটা গ্রামের ইছাহাক আলীও (৭০)।

এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কহিনুর ইসলাম জানান, বন্যার্তদের জন্য ২ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৩টি শিশুর পরিবারের সাহায্য বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

রোববার সকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন চিলমারীর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সূত্রঃ samakal