আজ “রাউফুন বসুনিয়া দিবস”

আজ “রাউফুন বসুনিয়া দিবস”

Rajarhatbd.com
সুজিৎ রায়, রাজারহাট,
রাউফুন বসুনিয়া (মৃত্যুঃ ১৩ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৫) ছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা। বাকশাল সমর্থিত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, সমাজবিজ্ঞান শেষ বর্ষের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া ছিল স্বৈরাচারের আতঙ্ক। ১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫ রাত ১১ টার দিকে স্বৈরাচার বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্বদানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুলের সামনে তৎকালীন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের গুণ্ডাদের গুলিতে নিহত হন। তার এই আত্মত্যাগ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে। যার ফলশ্রুতিতে এরশাদ সরকারের পতন হয়। ১৯৮৫ সালে রাউফুন ছিলেন সমাজবিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্র। তার আত্মত্যাগ তাকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিনত করে। তার আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া তাঁর মৃত্যু দিবসটিকে “রাউফুন বসুনিয়া দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।

জন্ম ও শিক্ষালাভ সম্পাদনাঃ
রাউফুন বসুনীয়া কুড়িগ্রাম জেলা’র রাজারহাট উপজেলা’র পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম। তিনি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মা ফিরোজা বেগম ছিলেন গৃহিণী। রাউফুন পাঙ্গারানী লক্ষী প্রিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতক শেষ করে একই বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। ১৯৮৫ সালেই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন । বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলামের স্বপ্ন প্রায় যখন সত্যি হতে চলেছে, তখনই ঘাতকের তপ্ত বুলেট কেড়ে নেয় তাঁর প্রাণ ।

আন্দোলন ও মৃত্যুবরণঃ
বাঙালি কখনোই অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত করেনি। সবসময় তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ১৯৮২ সালে সামরিক-জান্তা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করল তখনও দেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। বরাবরের মত এতে মুখ্য ভুমিকা পালন করে ছাত্র সমাজ, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এই সময় রাউফুন বসুনীয়া ছিলেন “বাংলাদেশ ছাত্রলীগের” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক। সামরিক-জান্তা সরকার অন্দোলন কে রুখতে “নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ” নামে নতুন একটি দল গঠন করে। আসলে তারা ছিল সরকারের গুন্ডাবাহিনী। তাদের কাজ ছিল সহিংসভাবে আন্দলনকে প্রতিহত করা। এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো দখল করে। ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী রাত এগারোটার দিকে নিত্তনৈমত্তিক প্রস্তুতি হিসেবে একটি মিছিল সূর্যসেন হল, মহসীন হল হয়ে জহুরুল হক হল ও এফ রহমান হলের মধ্যবর্তী সড়কে ওঠার মূহুর্তেই এফ রহমান হল থেকে মিছিলে কাটা রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে সরকার সমর্থক ‘নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ’র সন্ত্রাসীরা । এ সময় বাকশাল সমর্থিত জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাউফুন বসুনিয়া গুলিতে নিহত হন। কিন্তু আন্দোলন থেমে যায়নি বরং জোরদার হয়।

সমাধিঃ
এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রনেতা এখন চিরনিদ্রায় শায়িত আছে্ন কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে, তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে। গাছপালা ঘেরা শ্যামল প্রকৃতি, পুকুরের স্নিগ্ধ-স্বচ্ছ জলের পাশে তিনি শুয়ে আছেন বড় নীরবে-নিভৃতে।

বসুনীয়া পরিবারঃ
রাউফুন বসুনীয়ার মৃত্যুর পর তার বাবা-মা শোকে বিহব্বল হয়ে পড়েন। বাবা প্রতিদিন ভোরে নামাজ পড়ে কবরের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দোয়া পড়তেন আর কাঁদতেন। মা ফিরোজা বেগমও ছেলের শোকে অসুস্থ থাকতেন প্রায়ই। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে বাবা মারা যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর মাও মারা যান। রাউফুনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ফরচুন বসুনিয়া এবং ছোট ভাই নাহিন বসুনিয়া ঢাকায় থাকেন। কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় তাঁরা শেয়ার ব্যবসা করেন। মেজ ভাই শাফিন বসুনিয়া এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এক বোন লাকী বসুনিয়া রংপুরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন, আরেক বোন জলি বসুনিয়া গৃহিণী। এখন রাউফুনের বাড়িতে ভাই শাফিন এবং তাঁর স্ত্রী মঞ্জুয়ারা ছাড়া আর কেউ থাকে না।

রাজারহাটের এই বীর সন্তানের প্রতি রাজারহাট বিডি ডট কম – এর পক্ষ থেকে জানাই রক্তিম সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর আত্মত্যাগ জাতি কোনদিন ভুলবেনা।
শহীদ রাউফুন বসুনিয়া, রাজারহাটের অহংকার।
তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
প্রভাষক মোঃ এনামুল হক, সম্পাদক,রাজারহাট বিডি ডট কম।
সম্পাদনায়ঃ সুজিৎ রায়, ব্যাংক কর্মকর্তা ও নির্বাহী সম্পাদক, রাজারহাট বিডি ডট কম।