সেই পঙ্গু ধীরেনের অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ,প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান

সেই পঙ্গু ধীরেনের অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ,প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান

Rajarhatbd.com
রফিকুল ইসলাম,
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির জন্য গাছের ডাল কাটতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী ধীরেন চন্দ্র রায় (৪৫)। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে।

এখন উঠে দাঁড়াতে পারেন না। হাঁটাচলাও করতে পারেন না। সব সময় শুয়ে থাকতে হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্ষতচিহ্ন ও ঘা শুকাচ্ছে না। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চার মাস চিকিৎসার পর এখন অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী থাকায় চরম কষ্টে দিন কাটছে ৫ সদস্যের ধীরেনের পরিবারটির। বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে তার ২ সন্তানের লেখাপড়া।

জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলার মীরেরবাড়ি গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ধীরেন। গত বছরের ২০ আগস্ট তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী পাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চ তৈরি করার প্রয়োজনে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাছের ডাল কাটার জন্য ধীরেনসহ ৫ জনকে নেন। তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন স’মিল মালিক সুরুজ্জামান নেটু। ডাল কাটার একপর্যায়ে গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন ধীরেন।

তাকে প্রথমে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। ১৪ দিন চিকিৎসার পর ওই হাসপাতালে অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে কবিরাজী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ধীরেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধীরেনের অবস্থা জেনে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন ৪ লক্ষাধিক টাকা জোগাড় করে তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন।

গত ২১শে ডিসেম্বর সেখানে ভর্তির পর মেরুদণ্ডে একটি অস্ত্রোপচার হয়। চার মাস চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ৮ই এপ্রিল হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠানো হয়।

ধীরেন জানান, ওই হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন তার চিকিৎসা করেছেন। তিনি এক মাস পর আবার চিকিৎসার জন্য যেতে বললেও টাকার অভাবে মাস পেরিয়ে গেলেও যেতে পারছেন না। বর্তমানে তার চিকিৎসা ও পরিবারটি পুরোপুরি সাহায্য নির্ভর হয়ে পড়েছে বলে জানান ধীরেন।
ধীরেনের স্ত্রী সুমিত্রা রানী রায় জানান, ৭ শতকের বসতভিটার ৩ শতাংশ ও দুটি গরু বিক্রি করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানো হয়েছে। পরে রাজারহাটের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেন।

দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার কারণে সে টাকাও খরচ হয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালে থাকলেও প্রায় সব ওষুধ কিনতে হয়েছে। আর ওষুধ ও ইনজেকশনগুলো ছিল ব্যয়বহুল। সে আরো জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ধীরেন।

কিন্তু আয় বন্ধ হবার পর সংসারে তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ধীরেনের চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। একমাত্র মেয়ে ইতি এবার এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হবে।
ছেলে রিপন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের দু’জনের লেখাপড়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। সুমিত্রা বলেন, ‘ইউএনও সাহেব গত মাসে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য দুই হাজার টাকা দিয়েছেন। আর কোনো সহায়তা পাচ্ছি না।’
ধীরেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমি আজ পঙ্গু। তার একটু সহানুভুতি পেলে হয়তো আমি উঠে দাঁড়াতে পারতাম,প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান পঙ্গু ধীরেন ।’