রাজারহাটে আশ্রয়ন প্রকল্প- নতুন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখছে ওরা ১৬৭ পরিবার

রাজারহাটে আশ্রয়ন প্রকল্প-  নতুন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখছে ওরা ১৬৭ পরিবার

মোঃ এনামুল হক:
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেয়ে বেজায় খুঁশি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার অসহায় ১৬৭টি পরিবারের মানুষ। বর্তমান রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে প্রকল্প নির্মাণের ১৬৭ অসহায় পরিবারের জন্য ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে যার জমি আছে, ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

খড়-কুটা ও বসবাসের অযোগ্য ঘরে জীবনের বড় সময় কেটেছে অন্ধ দোতরা বাদক কান্দুরা বর্মন (৪৫)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ যেন পিছু ছেড়েছে তার। ঘর পাওয়ার পর থেকে দোতরা বাদক কান্দুরা বর্মনের দোতরার সুর তুলে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ৪ সদস্যের পরিবারের উপার্জনের জন্য অন্ধ কান্দুরা একমাত্র সম্বল দোতরা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাড়া-মহল­ায় গান গেয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে ৪ সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ চলে আসছে।

সরজমিনে রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের ছুটু গ্রামের হতদরিদ্র মৃত বীরবল বর্মনের অন্ধ পুত্র কান্দুরার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, নতুন ঘরের বারান্দায় বসে দোতরায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সুর তুলেছেন। সাংবাদিক এসেছে জানতে পেয়ে কান্দুরা তার স্ত্রী মালা রানীকে বলে স্যারদের বসতে দে না। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে সে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন জীবনে যতদিন বাঁচি থাকুম, ততদিন শেখ হাসিনাকে ভোট দিমু। ওনি আমাদের লাখ টাকা খরচ করে ঘর বানাইয়া দিবে, এটা স্বপ্নেও ভাবি নাই। শুধু ঘর নয় পাশে টয়লেটও বানিয়ে দিছে। এখন অন্ধ কান্দুরার স্বপ্ন দেখে যত কষ্টে করে হোক ২ সন্তানকে লেখা-পড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ বানানোর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে অসহায় দারিদ্র ও ভাসমান ১৬৭টি পরিবারকে বাছাইয়ের মাধ্যমে আবাসনের সুবিধায় আনা হয়। আবাসন নির্মাণের কাজটি গত ৭ আগষ্ট শুরু হয়ে ১০ অক্টোবর ২০১৮ ইং সমাপ্ত করে। ঘর নির্মাণে অনিয়ম ঠেকাতে আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান সার্বক্ষণিক তদারকি করে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে প্রকল্পের মেয়াদকাল যথা সময়ে শেষ করেন। এরপর নির্মাণ করা নতুন ঘর গুলো স্ব-স্ব ওই অসহায় পরিবারগুলো উঠতে শুরু করে।

সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য নির্মাণ করা এসব ঘরের মেঝে পাকা, সামনে খোলা বারান্দা আরসিসি পিলার, উন্নত টিনের বেড়ার ছাউনিতে ঘেরা। এর সঙ্গে একটু দূরে পয়ঃনিস্কাশনের স্যানিটারী ল্যাট্রিন। এদিকে সদর ইউপির ছাটমলি­কবেগ গ্রামের স্বামী মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী ছকিলা (৪৮), ছিনাই মীরেরবাড়ীর স্বামী মৃত গগন মামুদের স্ত্রী জামেনা বেগম (৪৫), ঘড়িয়ালডাঙ্গার খিতাবখাঁ মৌজার দরিদ্র মনোয়ারা বেগম (৪২) জানান, কখনো ভাবিনি সরকার হামাগো ঘর বানাইয়া দিবে। নতুন ঘর পেয়ে আমরা এখন ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া শিখিয়ে মানুষ বানাবো। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধান বলেন, গরীব-অসহায় মানুষের কল্যাণ, উন্নয়ন ও পুর্নবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। আর এ কাজটি শিডিউল অনুযায়ী শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। ঘর নির্মাণের সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ময়নুল হক বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় উপকরণের (কাঠ, সিমেন্ট, ইট-বালু, রড) এর গুণগত শতভাগ মান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করেছি।