তিস্তায় স্রোত বাড়লে বন্যা, স্রোত কমলে নদীভাঙন, বিপাকে এলাকাবাসী

তিস্তায় স্রোত বাড়লে বন্যা, স্রোত কমলে নদীভাঙন, বিপাকে এলাকাবাসী

আব্দুল্লাহ আল নোমান:

বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অধিকাংশ নদীই এখন বিলুপ্তের পথে। নদী বিলুপ্ত হলেও অধিকাংশ নদীর হিংস্র ভাঙন দিনের পর দিন বেড়েই আসছে। যার ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, গ্রাম, শহর!

কুড়িগ্রাম জেলাকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে দারিদ্র্য  জেলা হিসেবে চিনে। দারিদ্র‍্যতার কিছু কারণ হিসেবে খুঁজতে গেলে দেখা যায়, নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলোই এর আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। জেলায় ১৫-১৬টিরো অধিক নদ-নদী আছে যেগুলো জেলার মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এসব নদীর মধ্য কুড়িগ্রাম জেলায় প্রবাহিত নদ-নদী সমূহের তালিকাঃ
১। ব্রক্ষ্মপুত্র নদ, ২। তিস্তা নদী, ৩। ধরলা নদী, ৪। দুধকুমর নদী, ৫। ফুলকুমর নদী, ৬। সোনাভরি নদী, ৭। হলহলিয়া নদী, ৮। নীলকমল নদী, ৯। গংগাধর নদী,৷ ১০। শিয়ালদহ নদী, ১১। জিঞ্জিরাম নদী, ১২। বোয়ালমারি নদী, ১৩। সংকোশ নদী, ১৪। ধরণী নদী ১৫। কালজানী নদী এবং ১৬। জালছিড়া নদী সহ বেশ কয়েকটি নদী। ব্রহ্মপুত্রে, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদী বেশ পরিচিত। এর মধ্যে তিস্তা নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে লালমনিরহাটের দহগ্রাম ও নীলফামারীর ছাতনাই হয়ে প্রবেশ করেছে।

এরপর কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘেঁষে উলিপুর হয়ে চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় নদী স্রোতহীন থাকায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে। ফলশ্রুতিতে নদীতে পানির মাত্রা বেড়ে গেলেই পানি নিজের গতিপথে চলতে না পেড়ে আঘাত হানে পাশ্ববর্তী সব গ্রামে। শুরু হয় বন্যা। বন্যা থাকাকালীন সময়েই শুরু হয় নদী ভাঙন এবং বন্যা পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকে। যার ফলে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় গ্রামীণ মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন নিজের পৈতৃক  বসতভিটা। মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে তৈয়বখা, হংসধর,কালিরহাট এলাকা।

উপজেলার প্রত্যন্ত কালিরহাট অঞ্চলটির কালিরহাট বাজার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি আজ দাঁড়িয়ে আছে হুমকির মুখে। বন্যা পরবর্তী সময়ে প্রায় ৩৫-৪০ টি বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী স্থান বালুতে পরিপূর্ণ থাকায় এ বাঁধ স্থায়ী হবে না যদিও সাময়িকভাবে আটকানো হচ্ছে।একটু ভিতরে এগুলেই জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ২-৩ শ বাড়ি চোখে পড়বে। এলাকার প্রায় সব লোকই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নদীতে পানি বাড়লে বন্যা,আর কমে গেলে ভাঙ্গন। সাময়িকভাবে আসে কিছু ত্রাণ। লোকজন নিঃস্ব হওয়ার পর যখন নদী ভাঙন কিংবা বন্যা থাকে না তখন তাদের খোঁজ নেয় না কেউই। হয় না পরিত্রাণ। বছরের পর নিঃস্ব হওয়া, ত্রাণ নিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া ও পরিত্রাণ হীন থেকে জীবন-যাপন করে আসছে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের  তৈয়বখা, হংসধর,কালিরহাট সহ কুড়িগ্রামের অসংখ্য নদীর তীরবর্তী স্থানের মানুষ।

এরকম দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি এসব অঞ্চলের মানুষ, চায় স্থায়ী একটা সমাধান।সমাজের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সদয় সুদৃষ্টি ছাড়া এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া একেবারেই অসম্ভব।উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির জন্য অনুরোধ করেছেন এলাকাবাসী।